
বিএনপি কি তাহলে এক দফার আন্দোলনে গেল
দেশের শাসনক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ঢাকা শহরের সড়কের শাসন করে কখনো বিএনপি, কখনো জাতীয় নাগরিক পার্টি, কখনো জামায়াতে ইসলামী কিংবা অন্য কোনো দল।
গত বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশে ১৫ লাখ লোকসমাগমের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সাপ্তাহিক কর্মদিবসে ১৫ লাখ লোকসমাগম যে আরও কত লাখ লোকের অবর্ণনীয় ভোগান্তি ডেকে আনতে পারে, সেটা তাদের মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। তারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ কিংবা প্যারেড গ্রাউন্ডেও তারুণ্যের সমাবেশটি করতে পারত। তাতে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কম হতো।
এ বিষয়ে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কৈফিয়তের সুরে বললেন, তাঁরা ডিএমপিকে ১৫ লাখ লোকের উপস্থিতির কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো বিকল্প স্থান কিংবা সময়ের কথা জানানো হয়নি। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগ আমলে ডিএমপিকে সমাবেশ করার জন্য চিঠি দিলে কমিশনার না হলেও তার নিচের কর্মকর্তারা কথা বলতেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ডিএমপি পুরোপুরি নীরব।
বুধবার সকালে শাহবাগে জামায়াতে ইসলামীও একটি সমাবেশ করে তাদের দলীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি উপলক্ষে। সেটির প্রভাব পড়ে সকালের যানজটে। পরে বিএনপির সমাবেশের কারণে সেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। সন্ধ্যার পর ঢাকার বেশির ভাগ সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। সমস্যা হলো, যাঁরা জনগণের কল্যাণের কথা বলে রাজনীতি করেন, তাঁরা তাঁদের সমস্যা নিয়ে কম ভাবেন।
বুধবার তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ঘোষণা দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে, সেটা সরকারের জন্য কঠিন বার্তা বলেই মনে হয়। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাঁর এই ঘোষণাকে বিএনপির ‘এক দফা দাবি’ বলে অভিহিত করেছেন। তারেক রহমান নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, সংস্কারের নামে সরকার অযথা সময়ক্ষেপণ করছে এবং সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে।
নির্বাচন কমিশনের গেজেট বিজ্ঞপ্তির পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপিদলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোয় উষ্মা প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন,‘যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?’ (প্রথম আলো, ২৯ মে ২০২৫)
এই প্রশ্নের মাধ্যমে বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যিনি অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি, তিনিও জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অভিযোগ করেছেন, এখনো গণতন্ত্রের যাত্রা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কয়েক দিন আগে জুলাই ঐক্য নামের একটি সংগঠন শাহবাগে মার্চ ফর ইউনূস কর্মসূচি পালন করে। ওই সংগঠনের নেতারা আওয়াজ তুলেছেন ইউনূস সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক। সামাজিক যোগাযোাগমাধ্যমেও ইউনূস সরকার পাঁচ বছর থেকে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করুক বলে অনেকে আশা প্রকাশ করেছেন। এসব প্রচার বিএনপির নেতাদের সন্দেহ–সংশয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় ইউনূস সরকার পাঁচ বছর থাকবে, সেটা কীভাবে হবে? কেউ কেউ গণভোট নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে গণভোটের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দুজন সামরিক শাসক তাঁদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্য গণভোট করেছিলেন। আর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসার জন্য যে গণভোট হয়, সেটা ছিল আনুষ্ঠানিকতামাত্র। এর আগে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয়।