রাজধানীকে যারা অকেজো করে

www.ajkerpatrika.com ঢাকা মেট্রোপলিটন বিধান রিবেরু প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৫, ১২:৪১

রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তাহলে সেই সাধারণ জনগণকে প্রতিদিন ভোগান্তির ভেতর যারা ফেলে, তারা কি আদৌ রাজনৈতিক দল? নাকি মুখে মুখে জনগণের কথা বলা সুবিধাবাদী দল? এই প্রশ্নটি রইল অতি ডান, মধ্যপন্থী ও বাম—সব দলের প্রতি। অন্য দেশেও মানুষ আন্দোলন করে, বিশেষ করে যদি ইউরোপের কথা বলি, সেখানে রাজপথের মাঝে খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে, বড় বড় ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে তারা তাদের দাবি-দাওয়ার কথা লিখে দাঁড়িয়ে থাকে। পথ-চলতি মানুষ, গাড়িঘোড়ায় থাকা যাত্রী সেসব পড়ে। কিন্তু জনগণের চলাচলে তারা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এমনকি সেসব দেশেও যানবাহন খাতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। সে ক্ষেত্রে তারা বিকল্প পথ বাতলে দেয় দুদিন আগে, যাতে জনগণের যাতায়াতে অসুবিধা না হয়। এই অভিজ্ঞতা আমার এই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই হয়েছে বার্লিনে। সেখানে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই দেখছি রেলশ্রমিকেরা ধর্মঘট করছেন। কিন্তু এক দিনও আমার কাজে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। এক লাইনের রেলগাড়ি বন্ধ তো, অন্য লাইনেরটা তারা খোলা রেখেছে। বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে।


আর আমরা যেন বাংলা সিনেমার সেই খলনায়ক, যেখানে দেখা যায় নায়ককে শায়েস্তা করার জন্য তার প্রিয় কাউকে জিম্মি করে নিজের অভিলাষ বা ইচ্ছা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে খলনায়ক। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ভাবে সরকার বা ক্ষমতাকাঠামো হলো নায়ক, আর তার নায়িকা বা ঘনিষ্ঠজন হলো জনগণ। ব্যস, তারা যত রকম অসুবিধা ও বেকায়দায় ফেলা যায়, সেটার ভেতর জনগণকে ফেলে। এবার তারা নিজেদের দাবির কথা, হোক যৌক্তিক বা অযৌক্তিক, চিৎকার করে বলতে শুরু করে। ভাবখানা এমন, নায়ক ওরফে সরকার, সব ছুড়ে ফেলে নায়িকা অর্থাৎ জনগণকে রক্ষায় ছুটে আসবে! বাস্তবে বরং উল্টোটাই হতে দেখছি আমরা। আন্দোলনকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ইদানীং দেখা যাচ্ছে সরকারের তরফ থেকে জলাধারসমেত বিশেষ যান সমাবেশে হাজির করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরানো হচ্ছে, যেন আন্দোলনকারীরা অতি গরমে ক্লান্ত ও নেতিয়ে না পড়ে। চলচ্চিত্রে যেমন কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করা হয়, এখানে তেমন কায়দায় ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি সৃষ্টি করা হয়। ওদিকে দুই পাশে কিন্তু বাসযাত্রীদের জিব বেরিয়ে যাচ্ছে গরমে। সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মোটরবাইক আরোহীরা। নারী ও শিশুদের বর্ণনাতীত দুর্ভোগের কথা আর নাইবা বললাম। আর যদি অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী থাকে, তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না, অভিশাপের যে বৃষ্টি তারা সৃষ্টি করে, সেটা প্রকৃত বর্ষণের চেয়ে হাজার গুণে ভারী।



কয়েক মাস ধরেই রাজধানীর রাস্তাঘাট যে নাজুক পরিস্থিতির ভেতর পড়ছে অনবরত, তা নজিরবিহীন। আপনি রোদ ঝলমলে সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হলেন, কিংবা সন্তানকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, বেরিয়ে মাঝরাস্তায় এসে দেখলেন ভীষণ রকম বিটকেলে যানজট, গাড়ি কোথাও নড়ছে না। কী হয়েছে? গাড়ির বেতারযন্ত্র ছেড়ে বা ইন্টারনেটের দৌলতে জানতে পারলেন, ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চৌরাস্তায় একদল শিক্ষার্থী বা রাজনৈতিক কর্মী বা পেশাজীবী গোষ্ঠী বা কারখানার শ্রমিক অথবা সুযোগসন্ধানীরা বসে গেছে। তাদের কোনো না কোনো দাবি আছে। তাদের সব দাবি যে জাতীয় পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ বা জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট, তা-ও নয়। তো এসবের ভেতরেই রাজনৈতিক দলগুলো আবার প্রায়ই নিজেদের পেশিশক্তি প্রদর্শনের তাড়নায় বাস ভরে, লোক ভাড়া করে আনে তথাকথিত জনসমাবেশে। যাঁরা আসেন, তাঁদের চেহারা দেখেই বোঝা যায়, তাঁরা কোনো আদর্শ বা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে, আদর্শিক জায়গা থেকে জনসভাগুলোতে আসেন না। বাংলাদেশে যত বড় বড় আন্দোলন হয়েছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা যদি বলি, সেসব নিয়ে কোনো কথা নেই, কারণ সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দিয়েছে। মিছিলের সেসব মুখ দেখলেই বুঝবেন তারা প্রাপ্তির আশায় নয়, বরং বিশ্বাস ও বিবেকের তাড়নায় রাজপথে নেমে এসেছে। আমার আপত্তি সেসব জনসভা ও মিছিল নিয়ে, যেখানে কেবল লোক ভাড়া করে, মানুষের সামনে নিজেদের জনসমর্থন প্রমাণের জন্য করা হয়ে থাকে। এটা তো বাংলাদেশের জনগণ বোঝে। এটা যে প্রতারণা, সেটা সবাই জানে। কোনো রাজনৈতিক দলের আহ্বান যদি সত্যি সত্যি সাড়া জাগায়, তাহলে সেখানে লোক ভাড়া করে আনার প্রয়োজন পড়ে না। লোকজন রাজনৈতিক দলের সভ্য না হলেও, ঠিকই এসে আপনাদের সভায় যোগ দেবে, যদি জনজীবনের ন্যায্য কোনো বিষয় নিয়ে আপনারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেন।


তবে কোনো কোনো দল লোক ভাড়া না করলেও, নিজস্ব অন্ধ সমর্থকগোষ্ঠীর জোরেও তারা রাস্তা দখল করে জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেটা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন এই শহরটা তাদের শহর নয়, এই শহরে তাদের পরিবার, আত্মীয়পরিজনেরা থাকেন না। তাই যেমন খুশি, যখন খুশি এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বসে পড়া যায়। অচল করে দেওয়া যায় গোটা নগর।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও