জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও নজরুল

যুগান্তর ড. মাহফুজ পারভেজ প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৫, ১৩:০৩

এ বছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মদিন পালিত হলো জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে, যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রোহ ও বিপ্লবের বরপুত্র নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্জনের পেছনে যে সাংস্কৃতিক প্রণোদনা বিদ্যমান, তাতে নজরুলের অবদান অবিচ্ছেদ্য। একইভাবে রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ক হলো দুই মহাপর্বতের মৈত্রী ও মিলনের সম্পর্ক। বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপালের মধ্যকার সম্পর্ক এক স্বাভাবিক ও বাস্তব ঘটনা।


মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল-এ তিন ব্যক্তিত্ব মিলে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের যে সৌধ নির্মাণ করেছেন, তা এক অবিভাজ্য ও ঐতিহাসিক ঘটনা। একদেশদর্শী হয়ে এসব সম্পর্ককে দেখার অবকাশ নেই। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, সাযুজ্য ও অবদানকে দেখতে হবে সাংস্কৃতিক নীচুতা ও হীনম্মন্যতাকে অতিক্রম করে বৃহত্তর পরিসরে এবং উদার মানসিকতার মাধ্যমে।


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনির্মাণে এবং রাজনৈতিক অগ্রগমনে এ তিন সাংস্কৃতিক মহিরুহের অনুপ্রেরণা ও অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কেবল আমাদের মুক্তিযুদ্ধেই নয়, গত বছরের ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের রচনাবলীতে নজরুলের মতো বৈপ্লবিক চেতনার প্রতিফলন না থাকলেও এ দুজনের মধ্যে সাহিত্যিক যোগাযোগ ছিল। রবীন্দ্রনাথের বহু রচনায় এক ধরনের আধ্যাত্মিকতা ও আত্মমগ্ন নিবেদন ছিল স্পষ্ট, আর নজরুলের বিভিন্ন কবিতা গান এবং বিভিন্ন রচনায় রয়েছে অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ও তীব্র প্রতিবাদ। বস্তুত নতুন প্রজন্ম নজরুলকে যেভাবে ধারণ করেছে তার সঙ্গে অন্য প্রজন্মের ধারণ করার মধ্যে ব্যাপক পাথর্ক্য লক্ষ করা যায়। কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশে নজরুলকে নিয়ে অনেক একাডেমিক আলোচনা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের সময় নতুন প্রজন্ম যখন ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঠ নেমেছে, নজরুলেন কবিতা ও গান তাদের বিশেষভাবে উজ্জীবিত করেছে। এ উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট অতীতের অন্য কোনো প্রজন্ম এ প্রজন্মের মতো নজরুলকে মর্মচেতনায় এতটা ধারণ করতে পারেনি।


একজন মহত্তম স্রষ্টা হিসাবে নজরুল তার পূর্ববর্তী রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করেছিলেন। এটাই নজরুলের আধুনিক মানসিকতা ও অগ্রসরতার স্মারকচিহ্ন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে নজরুল রচনা করেছিলেন এক মর্মস্পর্শী স্মরণসংগীত। রবীন্দ্র প্রয়াণের পটভূমিতে অসীম শ্রদ্ধার প্রলেপে অবিস্মরণী হয়ে আছে সেই গান : ‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবি রে জাগায়ো না জাগায়ো না’। শুধু তাই নয়, ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুসংবাদে নজরুল শোকে বিহ্বল, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই অবস্থাতেই তিনি পরপর তিনটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক কবিতা রচনা করেন। একটিতে বলেন, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ধলে অস্ত-পথের কোলে’। কবিতাটি তিনি কলকাতা রেডিওতে যখন আবৃত্তি করছিলেন, তখন, আবৃত্তি করার সময়ই তার দেহে রোগাক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়। আবৃত্তি তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তার জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরের বছর ১৯৪২ সালে মাত্র ২২ বছরের সৃষ্টিশীল জীবনের অবসান ঘটিয়ে নজরুল চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যান।


রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল, জীবনে ও কর্মে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যক্তিত্বের মানুষ হলেও তাদের যোগাযোগ, সম্পর্ক ও পারস্পরিক মনোভাব কেমন ছিল, তা সাহিত্যবোদ্ধা মাত্রই জানতে আগ্রহী হবেন। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত মিল ও অমিল এবং সম্পর্কের ইতিবৃত্তটিও তাদের আলাদা সাহিত্য রুচি ও বৈশিষ্ট্যের মতো পার্থক্যপূর্ণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। তথাপি একই সময়কালের আগে ও পরে মহিরুহসম দুই ব্যক্তিত্বের অবস্থান হওয়ায় তাদের পারস্পরিক সংশ্লেষ ও সম্পর্কের তুলনামূলক পর্যালোচনা সবার বিশেষ মনোযোগের কারণ।


তবে সমাজের দশজন সাধারণ মানুষের বিচারে যা প্রামাণ্য মাপকাঠি, তা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে এবং তাদের সম্পর্ককে বিচার করা সংগত হবে না। কারণ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা সম্ভব-অসম্ভব এবং স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রে তা সর্বত্র প্রযোজ্য নয়। যেমন, স্কুলে কোনো একজন কতটুকু পাটিগণিত-বীজগণিত-ইংরেজি-বাংলা-ইতিহাস-ভূগোল ইত্যাদি শিখে কতটা ভালো ফলাফল করেছে, সেটা একজন সাধারণ লোকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের বিষয় হলেও প্রতিভাবানদের ক্ষেত্রে তা নয়। তাদের জীবনের দিকে তাকালেই এ সত্য প্রতিভাত হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও