
রাজনীতিকে ঘিরে ধরছে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা
দেশের রাজনীতি উদ্বেগজনক মাত্রায় ঘোলাটে হয়ে পড়েছে অথবা পরিকল্পিতভাবেই তা করা হয়েছে। এর মানে, কোনো না কোনো পক্ষ এই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।
সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে মানুষের মনে নানা উদ্বেগ, অজানা আশঙ্কা ও ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির দায়িত্বশীল পক্ষগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করছে না।
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে মাত্রায় জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে, তার নজির বাংলাদেশে নেই। পতিত ও পরাজিত পক্ষ ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল এই সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যে সরকারের হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার—আজ সরকার যখন মেয়াদের ১০ মাসের দিকে এগোচ্ছে, তখন এর উল্টোটাই মনে হচ্ছে।
জনগণ এখন সরকারকে দুর্বল ভাবতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মনে যে আশা জেগেছে, তার বাস্তবায়ন তারা দেখছে না। সরকার সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সরকারি কাজকর্ম ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সবচেয়ে বড় কথা, একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য দরকারি সংস্কার এবং গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার কাজেও অগ্রগতি দৃশ্যমান থাকবে—এসবই মানুষ দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু মানুষ দেখছে, দেশে এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মবের কর্তৃত্ব।
আমরা দেখছি, কেউ ফেসবুক বা ইউটিউব ব্যবহার করে মব তৈরি করছে, হুমকি দিচ্ছে এবং বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলছে আর সরকার নানাভাবে তাদের চাওয়া পূরণ করছে। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক নানা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে নানা দাবি তুলছে, সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে এবং তাদের চাপের কাছেও সরকার আত্মসমর্পণ করছে।
এখানে দেশ ও জনগণের স্বার্থ, দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বা পরিণতি কতটা বিবেচনা করা হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে শুরু করেছে।
সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের কর্মসূচি নিয়ে যা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন। রাষ্ট্র ও সমাজে যেহেতু অশুভ শক্তিও আছে, তারাও এই সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছে, সেই লক্ষণ পরিষ্কার।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে এখন ঘোলাটে হয়ে পড়েছে বা কোনো পক্ষ যদি ইচ্ছা করে ঘোলাটে করে থাকে, তা সরকারের দুর্বলতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। তা ছাড়া সরকারের মধ্যে গ্রুপিং ও বিভক্তির কথাও শোনা যায়।
সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত কোথা থেকে এসেছে কিংবা কে বা কারা নেয় তা বোঝা যায় না। এমনকি উপদেষ্টাদের কেউ কেউ নানা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁদের অন্ধকারে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি যেন একটা উদ্বেগজনক সীমায় এসে হাজির হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে—এমন কথাও আলোচনায় আছে। সরকারের মধ্যেও কেউ কেউ যে এমনটি চান, তা অনেকটাই স্পষ্ট।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
- শঙ্কা