‘জবের বন্যা’ বনাম হাজার হাজার ছাঁটাই ও বুলডোজারতন্ত্র

প্রথম আলো মাহা মির্জা প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৫, ১২:২১

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সামিট নিয়ে তুমুল উচ্ছ্বাস দেখা গেল। ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেই ফেললেন, ‘জবের বন্যা’ বয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকারের এই ‘স্মার্ট’ উদ্যোগ দেখে সবাই ভীষণ খুশি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সরকারি ‘জবের বন্যা’র প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার তীব্র ফারাক থাকে, বরাবরই।


এই যে বিদেশি বিনিয়োগ মানেই ‘জবের বন্যা বয়ে যাবে’, এই বাণী তো বিগত আমলের বিডার (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) চেয়ারম্যানও দিয়েছিলেন; টাকাপয়সা খরচ করে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন; বিপুলসংখ্যক কৃষক উচ্ছেদ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলও বানিয়ে ফেলেছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই ছিল, বিদেশিদের আকৃষ্ট করা। তখনকার বিডা আর এখনকার বিডার মধ্যে দর্শনগত জায়গায় কোনো পার্থক্য আছে?


বিদেশি বিনিয়োগের প্রচলিত কাঠামোটি কিন্তু আগাগোড়াই পাবলিকের সম্পদ ‘কুক্ষিগত’ করার একটি মডেল। বহুদিনের ‘দরিদ্র-অবান্ধব’ ও ‘শ্রমিক-বৈরী’ কাঠামোতে এ ধরনের ‘টপ-ডাউন’ বিনিয়োগ অর্থনীতির নিচুতলায় পরিবর্তন ঘটেনি কখনোই। তাই লাখ লাখ চাকরি তৈরি হবে, এমন প্রতিশ্রুতি শুনলেই আওয়ামী লীগ আমলের সেই মিথ্যা প্রচারণাগুলোই মনে পড়ে যায়। ‘পদ্মা সেতু হলে খুলনায় লক্ষ চাকরি তৈরি হবে’, ‘১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে ১ কোটি কর্মসংস্থান হবে’, এসব ফাঁকা বুলি আমরা ভুলিনি। বাস্তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এক হাজার চাকরিও তৈরি হয়নি; খুলনার খালিশপুর এখন বেকারের এলাকা।


এগুলো কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল মডেলের দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। প্রথমে জমি কেড়ে নেয়, এরপর বিনিয়োগ হয় না; এরপর ‘জোন’গুলো বাতিল হয়, অথচ তত দিনে শহরে চলে এসেছেন হাজারো কৃষক—নগরের নতুন হকার; নতুন অটোরিকশাওয়ালা—সবার ঘৃণার পাত্র।


কারখানা বন্ধ: সরকারের দায় নেই


চাকরি তৈরি নিয়ে সরকারের অতি উচ্ছ্বাস সমস্যাজনক মনে হওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। এই মুহূর্তে দেশের প্রতিটা শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে; নিয়মবহির্ভূতভাবে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। কিন্তু এই চরম সংকট মোকাবিলা করতে ‘অভ্যুত্থানের সরকার’ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? একদিকে ৩৫ লাখ চাকরির গল্প শোনানো হচ্ছে, আরেক দিকে গত ৮ মাসে বন্ধ হয়েছে ১১৩টি কারখানা। কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার শ্রমিক (এর মধ্যে আছে বেক্সিমকোর ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি কারখানা। এস আলম গ্রুপের ৬টি কারখানা বন্ধের পর বেকার হয়েছেন অর্ধলক্ষ মানুষ)।


এসব কলকারখানা বাঁচাতে কী করেছে সরকার? মালিকানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে নির্বিচার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে, এই সত্য আড়াল করে শ্রমিকদের আন্দোলনকে কি ‘ষড়যন্ত্র’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়নি? শ্রমিক তাঁর কর্মজীবনের সবটুকু দেবেন কারখানাকে, তারপর হরেদরে ছাঁটাই হবেন, বকেয়া বেতনের জন্য রাস্তায় দাঁড়াবেন, অথচ দেশের শ্রম মন্ত্রণালয়, শ্রমসচিব, শ্রম আদালত, শ্রম ভবন—কারও কোনো দায় থাকবে না? ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক যখন আন্দোলন করবেন, ‘বীরপুরুষ’ যৌথ বাহিনী তখন গুলি চালাবে, পরিবার বাঁচাতে শ্রমিক যখন ধারদেনা করে একটা অটোরিকশা কিনে রাস্তায় নামবেন, বীরপুরুষ সিটি করপোরেশন তখন হাসিনার সেই চিরচেনা হলুদ বুলডোজারগুলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও