যুবরাজ সালমানকেই কেন বেছে নিচ্ছেন ট্রাম্প
একবার বিষয়টা ভেবে দেখুন তো—ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে আশার আলো হয়ে উঠছেন সেই লোক, যিনি গাজা খালি করে সেখানে সমুদ্রসৈকতের অবকাশকেন্দ্র করার স্বপ্ন দেখেছেন। এখন পর্যন্ত বর্তমান দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সবচেয়ে পরিষ্কার এবং হয়তো একমাত্র পথটি দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেই। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়া ইসরায়েলের প্রতি তিনি ক্রমশই বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।
ট্রাম্পের বদলে যদি যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট হতেন, তাহলে গত সপ্তাহে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঘটনাপ্রবাহকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক, এমনকি যুগান্তকারী পরিবর্তন বলে মনে করা যেত। কিন্তু লোকটা যেহেতু ট্রাম্প, সে কারণেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, এটা স্থায়ী নাকি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত। কেননা তার বেলায় কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বদলে যেতে পারে।
ঘটনা যা দেখা গেছে, তার মধ্যে আমরা যদি আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখি, তাহলে বলা যায়, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সফর মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির একেবার স্পষ্ট এক পরিবর্তন। বিশেষ করে যে দেশটিকে দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রধান মিত্র হিসেবে দেখছে, সেই দেশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বড় পরিবর্তন। নিখাদ সত্যটা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলে যাননি।
এটা হয়তো ব্যাখ্যা করা এড়িয়ে যাওয়া যেত, কিন্তু সেটা যাচ্ছে না তার মূল কারণ, সফরে ট্রাম্প যা যা বলেছেন ও করেছেন। সৌদি আরবে গিয়ে তিনি কেবল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানানি, তিনি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। যুবরাজকে তিনি বলেছেন, ‘আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।’ অথচ সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে একসময় কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেছিলেন। এবার ট্রাম্প গিয়ে যুবরাজকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি এমন শক্তিমত্তায় দেশটাকে বদলে দিচ্ছেন, সেখানে ঘুমানোর সময় কীভাবে পান।
দুই নেতা একটি চুক্তি করেছেন। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে। গত সপ্তাহের আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সম্পর্কের মূল ভিত্তি ছিল এই নিশ্চয়তা যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ইসরায়েল সব সময় সামরিক দিক থেকে শ্রেষ্ঠ থাকবে। কিন্তু সেই গ্যারান্টি এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ল। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, এখন সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার’। এ মর্যাদা এত দিন একমাত্র ইসরায়েলের ছিল।
উপরন্তু কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই ট্রাম্প সৌদি আরবের প্রতি এই ভালোবাসা দেখালেন। এখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করার কোনো শর্ত ছিল না।
এ ধরন তার সফরের সবখানেই দেখা গেছে। সিরিয়া গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন। সিরিয়ার নতুন নেতাকে ‘আকর্ষণীয়’ ও ‘লড়াকু’ বলে তিনি প্রশংসা করেছেন। অথচ ডিসেম্বর পর্যন্ত আহমেদ আল-শারা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় শীর্ষ পলাতক দাগি সন্ত্রাসী। কেননা আল-কায়েদার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাঁর মাথার দাম ছিল এক কোটি ডলার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মধ্যপ্রাচ্য সফর
- ডোনাল্ড ট্রাম্প