
তাপপ্রবাহ প্রতিরোধে সবুজায়ন
পৃথিবীর বন-জঙ্গলে তখন মানুষের বসবাস। বনের সুমিষ্ট ফল এবং পশুর মাংসই ছিল তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তবে বনে মানুষের বসবাসের দিন অবসান হলো ক্রমান্বয়ে। সৃষ্টি হলো শহর-বন্দর-রাজপথ, কলকারখানা ইত্যাদি। আমরা যা কিছু বলি না কেন, বৃক্ষ ছাড়া মানুষের জীবন অচল। যে কারণে বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। আধুনিক বিশ্বে বনজ সম্পদ যেকোনো দেশেই উল্লেখযোগ্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। বৈজ্ঞানিকদের ভাষ্য, বন শুধু প্রাকৃতিক শোভা দিয়ে সৃষ্টির বৈচিত্র্য প্রকাশ করে না, আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন এ বৃক্ষ থেকে আমরা পাই অক্সিজেন। বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। গাছপালা আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে দেশে দেশে বর্তমানে বন সৃষ্টির দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ।
দেশে চলমান তাপপ্রবাহে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে। ছোট সন্তানরা ভুগছে নানা রোগে। প্রকৃতির রূপ বদলে গেছে। এক জায়গায় বৃষ্টি হলে একটু দূরেই তীব্র রোদ। বৃষ্টি আবার বেশিক্ষণ না, একটু পর শুরু হয় গুমোট গরম। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো বৃক্ষরোপণ এবং সেই বৃক্ষের পরিচর্যা করা। দিন দিন সবুজ বনানীর পরিধি ছোট হয়ে আসছে। এক শ্রেণির অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী গণহারে গাছ কেটে বনকে দিচ্ছে উজাড় করে। এগুলো দেখার কেউ নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও গাছের ওপর প্রভাব পড়ছে। তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, নতুন নতুন বাসস্থান নির্মাণ। ঘরবাড়ি তৈরির জন্য গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে কারও কিছুই বলার নেই। এভাবে আমরা সবুজ বনানী হারাচ্ছি। আমাদের এ দেশে সবকিছু ঠিক আছে। শুধু ভুগছি কিছু মানুষের সৎ মানসিকতার অভাবে। গাছের গুরুত্ব মানুষ যতদিন না বুঝবে, ততদিন বৃক্ষনিধন বন্ধ হবে না। যে কারণে বৃক্ষকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করা প্রত্যেকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে মনে করি। এক তথ্যে জানা যায়, জাপানিদের বৃক্ষপ্রীতির কথা। তারা বৃক্ষকে খুবই ভালোবাসে। বৃক্ষ নাকি তাদের পরম বন্ধু। এও জানা গেছে, তারা বৃক্ষ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে বৃক্ষকেই জড়িয়ে ধরে। এমনভাবে তারা পরিচর্যা করে, যেন বৃক্ষের ওপর কোনো আঘাত না আসে। আমরা তাদের আচরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
আমরা জানি, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ সরকারও বৃক্ষরোপণ অভিযান চালু করেছে। এই বৃক্ষই আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির বুনিয়াদ। বহুকাল আগে থেকেই আমাদের দেশে জ্বালানিসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বৃক্ষ। এক কথায় বলা যায়, জীবনধারণের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৃক্ষের দান অপরিসীম। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, কর্মসূচি পালনেই বৃক্ষরোপণ শেষ। এরপর আর তেমন কেউ খোঁজখবর রাখে না। রোপণকৃত চারাগুলোর পরিচর্যা না করার ফলে, সেগুলো আর বড় হতে পারে না। সবুজ বনানীর স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয় না। গভীর জঙ্গলেও উল্লেখযোগ্য হারে বৃক্ষ কমে গেছে। বৃক্ষ ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করছে। যার কারণে গভীর জঙ্গল দিন দিন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বন সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট বন বিভাগ রয়েছে। তারপরও বৃক্ষনিধন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। বৃক্ষের বংশবিস্তারে পাখির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। বৃক্ষে বসে পাখি পাকা ফল খায় বিচি সমেত। এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাখি উড়ে চলে যায়। গাছে বসে পাখি মল ত্যাগ করে। মলের সঙ্গে ওই বিচিগুলোও মাটিতে পড়ে। নতুন চারা গজায় বিচি থেকে। এভাবে পাখি বৃক্ষের বংশবিস্তারে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। আমরা এ বিষয়ে তেমন ভাবি না বলে, এত রহস্য জানি না।
আসল কথা হচ্ছে, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সবশ্রেণির মানুষকে উৎসাহিত করে গাছের উপকারিতা বোঝাতে হবে। যারা উদ্যোক্তা এ বিষয়ে তাদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। পাখি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি বৃক্ষের বংশবৃদ্ধিতেও তারা যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব, গভীর অরণ্যে কীভাবে এত বৃক্ষ জন্মে! সেখানে তো আর বৃক্ষরোপণের মতো কোনো কর্মসূচি নেই, নেই কোনো পরিচর্যা। আমরা যদি গাছের চারার প্রতি একটু নজর দিই, যতœবান হই, তাহলে সবুজ বনানী সৃষ্টি করা তেমন কষ্টকর হবে না। নিজের যতটুকু খালি জায়গা আছে, সেখানেই যেন আমরা ‘অক্সিজেনের ডিপো’ নামে খ্যাত গাছের বংশবিস্তারে প্রচেষ্টা চালাই। যখন করোনা ভাইরাসের তা-বে বিশ্ববাসী অস্থির, তখন ইতালির অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। ইতালিরই এক বিত্তশালী বয়স্ক লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানের নামকরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওনার ভাগ্য ভালো, করোনা ভাইরাস থেকে সহসা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার প্রাক্কালে চিকিৎসাসেবার বিল হাতে পেয়ে তিনি নীরব হয়ে গেলেন। একপর্যায়ে বললেন, এ বিল আমি দিতে পারব না। তার ছেলেরা বাবার কথায় অপমানিতবোধ করল। ছেলে ভাবে এ হাসপাতালের মতো কয়েকটা হাসপাতাল আমরা কিনতে পারব, বাবা এইগুলো কী বলে?
- ট্যাগ:
- মতামত
- তাপপ্রবাহ
- বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি