
কেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন
‘কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে!’—জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত এক কবিতার লাইন। উদ্দেশ্য যা–ই হোক, দুজন মানুষের গোপন আলাপ জানার অদম্য আগ্রহ এখানে স্পষ্ট। গোপন কথা বা কানে কানে বলা কথা জানার যে তাড়না, সেটা মানুষের স্বভাবজাত। কিন্তু গোপন কথা তো শেষ পর্যন্ত গোপনই। দুজন মানুষ গোপনে কথা বলছেন মানে তাঁরা সচেতনভাবেই চান না, এই আলাপে অন্য কারও অংশগ্রহণ থাকুক।
এর ফলে কারও গোপন কথা থেকে দূরে থাকাই ভালো। এটাও ঠিক যে সব গোপন কথা আবার জানার সুযোগও থাকে না। যেমন ফুটবল মাঠে দুজন মানুষ যখন মুখে হাত দিয়ে কথা বলেন, তখন টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে সেটা শোনার সুযোগ থাকে না। খেলার মাঠে মুখে হাত দিয়ে বলা সেই কথা হতে পারে দুজন সতীর্থের মধ্যে, কোচ ও শিষ্যদের মধ্যে, দুই দলের খেলোয়াড়ের মধ্যে কিংবা খেলোয়াড় ও রেফারির মধ্যে।
মাঠে বলা প্রায় প্রতিটি কথাই আসলে গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এভাবেও বলা যায় যে গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই কথাগুলো গোপন। একজন কোচ যখন শিষ্যকে রণকৌশল বুঝিয়ে দেবেন, তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, প্রতিপক্ষ সেটা শুনে যাক বা ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে বুঝে যাক। অথবা রেফারির সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে তর্কের সময় একজন খেলোয়াড় চাইবেন না, সাংবাদিকেরা তাঁর কথা শুনে মুখরোচক কোনো খবর তৈরি করুক। এক সময় অবশ্য এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। তবে এখনকার ফুটবলে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। টেলিভিশনে যদিও সেসব আলাপ এমনিতেও শোনা সম্ভব নয়।
কিন্তু কেউ না কেউ যে ঠিকই বসে থাকেন লিপ রিড বা ঠোঁট পড়বেন বলে। ঠোঁট পড়ার এই কাজ যেমন সংবাদমাধ্যমগুলো করে থাকে, একইভাবে প্রতিপক্ষ দলও অনেক সময় এই কাজ করে। আর এ কারণেই কথা বলার সময় হাতটা মুখের সামনে রাখতেই হয়। যাতে মাঠে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা মাঠের বাইরে আছেন, তাঁরাও যেন ঠোঁট পড়ে কিছু বুঝতে না পারেন।