সব ধর্ষণের বিচার ২১ দিনেই হোক

বিডি নিউজ ২৪ সিরাজুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৫, ১১:৩৬

কিছু ঘটনা সারাদেশকে, এমনকি পৃথিবীকে নাড়া দেয়। মাগুরার আট বছরের সেই শিশুটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড এমনই একটা ঘটনা। সারাদেশের মানুষকে এই পৈশাচিক ঘটনাটি শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। বিচারের দাবিতে সোচ্চার মানুষগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেন তারা। অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন দেয় প্রতিবাদী জনতা। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অতিদ্রুত এই মামলার বিচার শেষ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই আশ্বাসের বাস্তবায়নও আমরা দেখতে পাচ্ছি। মঙ্গলবার (১৩ মে) এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আজ শনিবার (১৭ মে) এ মামলার রায় ঘোষণা করবে আদালত। বিচার শুরুর মাত্র ২১ দিনের মাথায় এ মামলার বিচার কাজ শেষ হলো। এটা অবশ্যই ভালো দিক। দোষীরা শাস্তি পাবেন এবং কেউ নির্দোষ হলে মুক্তি পাবেন– এটাই প্রত্যাশা।


এই মামলার বিচার শেষ করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তিনিও মঙ্গলবার শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলায় আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল অ্যাভিডেন্স ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ধরনের অপরাধ যাতে আর না ঘটে, এ রায় সেটার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্ত করা ও তাদের বক্তব্য শুনেছেন।’


গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৬ মার্চ সকালে ছোট ছেলের কক্ষে (শিশুটির বোনের স্বামীর কক্ষে) শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।


এই মামলার মতো ধর্ষণ-হত্যার অন্য মামলাগুলোরও দ্রুত বিচার কাজ শেষ হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। মাগুরার শিশুটির ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন সারাদেশ উত্তাল, ঠিক তার আগে বরগুনায় এক কিশোরী অপহরণ-ধর্ষণের শিকার হয় এবং মামলা করায় তার বাবা খুন হয়। কিন্তু সেই ঘটনা অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। বিচার শুরু হয়েছে কি না, জানা যায়নি। মাগুরার শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ মার্চ। আর বরগুনার শিশুটি অপহরণ-ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ মার্চ রাতে। ৫ মার্চ সকালে বাড়ির পাশের ডিসিপার্ক সংলগ্ন জায়গা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসা করলে কিশোরী জানায়, সৃজীব (আসামি) তাকে মুখ চেপে ধরে অপহরণ করে নিয়ে নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ৫ মার্চ শিশুটির বাবা মামলা করেন। এই অপহরণ-ধর্ষণ মামলার ধার্য তারিখ ছিল ১২ মার্চ। ১১ মার্চ রাত ১টার দিকে বাড়ির পেছনে তার লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পর শিশুটির মা পরিবারের সব সদস্যর মৃত্যু প্রার্থনা করছিলেন বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। এ নিয়ে ১৮ মার্চ ‘চলুন সবাই বরগুনা যাই’ শিরোনামে ভিউজ বাংলাদেশ-এ আমার একটা লেখা প্রকাশিত হয়। আমি শিশুটির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম। পরে অবশ্য বিএনপি-জামায়াত এবং স্থানীয় কিছু রাজনীতিক শিশুটির পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। কিছু আর্থিক সহযোগিতাও তাদের করা হয়। ব্যাস, এ পর্যন্তই।


শিশু ধর্ষণ-হত্যা বেড়েছে


মাগুরার শিশুটি ধর্ষণ-হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরের মিঠাপুকুরে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ১১ মে সকালে উপজেলার বালুয়া মাছিমপুর ইউনিয়নে নিজ বাড়ির পাশ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফজলু মিয়া (৪৫) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযুক্ত ফজলু কৌশলে শিশুটিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এসময় চিৎকার দেওয়ায় শিশুটিকে হত্যা করা হয়। পরে বাড়ির পাশে বালুর স্তূপে মরদেহ চাপা দিয়ে রাখেন তিনি।


শিশুটিকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন বাড়ির লোকজন। এসময় প্রতিবেশী এক নারী বালুর নিচে হাত দেখতে পান। পরে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ফজলুকে আটক করে তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন এবং গাছপালা কেটে ফেলেন। গত চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ১৭৬ শিশু হত্যা এবং ২২৬ শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। ৮ মে এ তথ্য জানায় বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র। হত্যাকাণ্ডের শিকার ১৭৬ শিশুর মধ্যে ৯৭ বালক ও ৭১ বালিকা। ৮ জন ছেলে না মেয়ে তা চিহ্নিত করা যায়নি। ৪১ জন নিখোঁজ ছিল। নির্যাতনের পর ২৮ জন হত্যার শিকার এবং আত্মহত্যা করেছে ৩৬ জন। সহিংসতার শিকার ২২৬ শিশুর মধ্যে ১৭০ বালিকা ও ৫৫ বালক। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৯, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২৭, ধর্ষণের শিকার ১৫ বালক, বালিকা ৯৩ এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২২ বালিকা। কিন্তু ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর হলো– পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, অপরাধকে ছোট করে দেখা, মামলা হওয়ার পর দীর্ঘ সময় নিয়ে তদন্ত করা, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ডিএনএ প্রতিবেদন আবশ্যক- সেই প্রতিবেদন দেরিতে দেওয়া, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, বড় অপরাধেও আসামির জামিন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় অপরাধ বাড়ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও