
সুতা আমদানির মারপ্যাঁচে তৈরি পোশাকশিল্পের ক্ষতিটা কোথায়
দেশের যেকোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যা দেশি শিল্পের বিকাশে সাহায্য করবে। তাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাবে। চার দশকের বেশি সময় উদ্যোক্তাদের একাগ্রতা ও পরিশ্রম, শ্রমিকদের অবদান এবং সরকারের নীতি সহায়তার কারণে তৈরি পোশাকশিল্প একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শীর্ষ রপ্তানি আয়ের এই শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই। বরং মাঝেমধ্যেই বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মকাণ্ড কিংবা ভুল নীতির কারণে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে শিল্পটি।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে অনেক আলোচিত বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানির সুযোগটি বিদ্যমান রয়েছে। যদিও তাতে সময় বেশি লাগে। তার কয়েক দিন আগে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) ৮ এপ্রিল এই সুবিধা বাতিল করে।
বাংলাদেশে তুলা উৎপাদন হয় না বললেই চলে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা আমদানি করে সুতা উৎপাদনে অনেক স্পিনিং মিল বা সুতার কল গড়ে উঠেছে। ভারত থেকেও তুলা আমদানি হয়। মাঝে মোট তুলা আমদানি একটি বড় অংশ ভারত থেকে এলেও এখন কিছুটা কমেছে। তুলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এই দেশ থেকে সুতাও আসে। বাংলাদেশে স্পিনিং মিল থাকার পরও ভারত থেকে সুতা আসার বড় কারণ দাম। ভারতীয় সুতার দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ সেন্ট কম পড়ে। বাংলাদেশের সুতার দাম বেশি হলেও নগদ সহায়তার কারণে সেটি পুষিয়ে নিতে পারতেন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তবে বিগত সরকার দুই দফায় নগদ সহায়তা কমানোর পর পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে গত জুলাইয়ের পর কিছুটা কম দামের কারণে ভারতীয় সুতা আমদানি বাড়তে থাকে।
ভারতীয় সুতা আমদানি প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন বাংলাদেশের স্পিনিং মিলের মালিকেরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ভারত থেকে সুতা আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও কম মূল্যে সুতা আসছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, স্থলসীমান্তে বাংলাদেশ কাস্টমসে যে পরিমাণ সুতা আমদানির কথা বলা হয়, এর চেয়ে বেশি সুতা দেশে আসে। লোকবলের অভাবে সশরীর পরিদর্শন করার সক্ষমতা কম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এই সুযোগে ৩০ কাউন্টের সুতার চালানের ভেতরে ৮০ কাউন্টের সুতা আনার অভিযোগও আছে।