আজও প্রাসঙ্গিক ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চ

যুগান্তর মোহাম্মদ ইমরান হোসেন প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫, ০৯:৪৪

১৬ মে আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজ থেকে প্রায় অর্ধশতক আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে আয়োজিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ। ভারত সীমান্তঘেঁষা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে দাঁড়িয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাঙালি জাতিকে দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক বার্তা : ‘জলের অধিকার ছাড় দেওয়া যায় না।’ ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত যখন একতরফাভাবে গঙ্গার প্রবাহ থামিয়ে বাংলাদেশের প্রাণপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে উদ্যত হয়, তখন রাষ্ট্রীয় নীরবতা ভেঙে ভাসানী একাই লক্ষ জনতার নেতৃত্বে প্রতিবাদের মশাল জ্বালিয়েছিলেন। তার সেই প্রতিবাদ যেমন দেশের ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতেও তেমনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।


ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি প্রকৌশলগত বা কাঠামোগত সংকট ছিল না; ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আত্মসমর্পণের বড় উদাহরণ। মওলানা ভাসানীই তা প্রথম বুঝেছিলেন। তাই তো ৯৬ বছরের বার্ধক্যকে উপেক্ষা করে লক্ষ জনতাকে সংগঠিত করে ৫০ মাইল দীর্ঘ ফারাক্কা লংমার্চের নেতৃত্ব দেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।


ভারত সরকার ১৯৬১ সালে গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে, যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। আর সে বছরের ২১ এপ্রিল ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে পানি প্রত্যাহারের চুক্তি আদায় করে নেয় বাংলাদেশের কাছ থেকে। সেই যে পানি প্রত্যাহার শুরু হয়েছে, তারপর থেকে সব চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তা অবিরতভাবে চালিয়ে গেছে ভারত। ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাত্র ১ বছরেই এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের পদ্মা এবং পদ্মার শাখা নদীগুলোর প্রবাহের ওপর। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো নদী খাতে জমি চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল, পানির স্তর নেমে গিয়েছিল, নদীভাঙন বেড়েছিল, হুমকিতে পড়েছিল মানুষের জীবন-জীবিকা। মাত্র এক বছরের পর্যবেক্ষণেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ওপর জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ুগত ব্যাপক প্রভাব বুঝতে পারেন দূরদর্শী নেতা মওলানা ভাসানী। প্রাণ-প্রকৃতির পালনবাদী রাজনীতির প্রবক্তা মওলানা ভাসানীর সেই দূরদর্শিতা আজও বাঙালির পাথেয়। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ফিরেই বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ে মাঠে নামেন আর ঘোষণা দেন ফারাক্কা লংমার্চের। শারীরিকভাবে অসুস্থ ও ৯৬ বছর বয়সি মওলানা ভাসানীর লংমার্চ ঘোষণায় বিস্মিত হয় তৎকালীন পুরো বাংলাদেশ। তবে তার দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করে দেশের জনসাধারণকে। তাই তো তার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৬ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট পর্যন্ত ৫০ মাইলের দীর্ঘ লংমার্চে অংশ নেন লক্ষ জনতা। পাশাপাশি রাস্তাপারের হাজার হাজার গ্রামবাসী খাবার আর পানি নিয়ে লংমার্চের ক্লান্ত জনতার পাশে দাঁড়ান। পরদিন ১৭ মে বিকালে কানসাটে পৌঁছে যায় বিশাল এ লংমার্চ। সেখানে উপস্থিত জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় নীরবতার দেওয়াল ভেঙে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘নদীর পানি আটকে রাখা মানে আমাদের গলাটিপে ধরা। আমরা বাঁচতে চাই, বাঁচতে হলে পানি চাই। এই পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার।’


ভাসানীর ঐতিহাসিক সেই লংমার্চ ছিল আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম জাতীয় আন্দোলন। তিনি শুধু শাসকগোষ্ঠী নয়, প্রতিবেশী শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি-ভারতের পানি আগ্রাসন থামেনি, বরং তিস্তা থেকে শুরু করে আড়াই ডজন নদীর ওপর অন্যায্য নিয়ন্ত্রণ এখনো একই রকমভাবে চলমান। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের নদীগুলো পানিশূন্য থাকছে, বাড়ছে মরুকরণ। সেচের পানির অভাবে লাখ লাখ হেক্টর আবাদি জমি চাষের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষি পেশার সঙ্গে যুক্ত কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পতিত হচ্ছে, বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন থেকে। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুম এলে ভারতের আকস্মিকভাবে ছেড়ে দেওয়া পানিতে বন্যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। নদীর বুকে পলি জমে চর জাগছে আর দু-কূল তীব্র ভাঙনের শিকার হচ্ছে। ফলে নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখ লাখ পরিবার। ন্যায্য পানির হিস্যাবঞ্চিত হয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের পথে! মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালে যে আশঙ্কা করেছিলেন, আজ সেই আশঙ্কাই বাস্তব হয়ে দেখা দিচ্ছে। পুরো দেশের নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে প্রতিবেশী ভারত সরকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও