টেকসই উন্নয়নে পারিবারিক নীতিমালা

www.ajkerpatrika.com হাসান আলী প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৫, ১০:৩০

পরিবার হলো মূলত রক্ত-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সংগঠন, যেখানে সব সদস্যের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং বিনোদনের আয়োজন হয়ে থাকে। পরিবার কখন কী কারণে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বেশির ভাগের মত হলো, মানুষ সমতলে বসবাস করার সময় কৃষিকাজ শিখে ফেলে। কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য গোলাঘর এবং নিজেদের জন্য বসতঘর নির্মাণ করতে শুরু করে। প্রাকৃতিক প্রয়োজনে পরিবার গড়ে ওঠে। সম্পদের বিলিবণ্টনকে কেন্দ্র করে বিবাহ প্রথা এবং উত্তরাধিকারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বিভিন্ন রকমের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বামী-স্ত্রীকেন্দ্রিক একক পরিবারই মূল ধারায় চলে আসছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, পুষ্টিকর খাবারের সহজলভ্যতা, উন্নত চিকিৎসার ফলে মানুষের জীবনযাপন সহজতর হয়ে উঠেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের দায়দায়িত্ব পালন ব্যক্তির জীবনকে পীড়াদায়ক করে ফেলে।


সমাজের নানা রকমের পরিবর্তনের পর মানুষ পরিবারকেন্দ্রিক জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে শুরু করেছে। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক সভায় ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের থিম বা প্রতিপাদ্য হলো, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবারভিত্তিক নীতিমালা’।


লোভ-লালসা, রাগ-ক্ষোভ, হিংসা-প্রতিহিংসা, লুটপাট ও দুর্নীতির তাণ্ডবে পরিবারগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জৌলুশ হারিয়ে প্রায় প্রাণহীন, মানহীন মলিন চেহারায় হাজির হয়েছে কিছু পরিবার। পরিবারে শান্তির পরিবর্তে অশান্তির আগুন জ্বলছে। মানুষের মধ্যে পরিবারবিমুখ হওয়ার তাড়না প্রবল হয়ে উঠেছে। পরিবার হলো রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম ইউনিট। সেটা অশান্ত, অকার্যকর হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।



পরিবার মূলত ভবিষ্যতের সুনাগরিক গড়ে ওঠার পীঠস্থান। শিশুরা বড়দের স্নেহ-মমতা, সেবাযত্ন, ভালোবাসা নিয়ে বড় হলে ভবিষ্যতে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে আন্তরিক হবে। পরিবারে শিশু জন্মলাভের পর সদস্যদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। নতুন অতিথির জন্য সবার আনন্দ-উচ্ছ্বাস পরিবারের সম্পর্ক মজবুত হতে সহায়তা করে। পরিবার সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষালাভের সুযোগ দেয়, অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, নৈতিক শিক্ষা দেয়, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে, রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ায়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার তাগিদ দেয়, প্রবীণদের সম্মান মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।


কৃষিভিত্তিক সমাজকে কেন্দ্র করে যে যৌথ পরিবারের জন্ম হয়েছিল, শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে এসে একক পরিবারে রূপ নিল। ইচ্ছে করলেই আগের যৌথ পরিবারে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। তবে যে করেই হোক দুর্বল পরিবারব্যবস্থাকে সবল করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে পরিবারের সব সদস্য একই রকমের দক্ষতা, যোগ্যতার অধিকারী হবে না। কেউ লেখাপড়ায় এবং আয়-রোজগারে ভালো করবে, নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে পরিবারে ভূমিকা পালন করবে।


আবার কেউ খেলাধুলা, নাচ, গান, কবিতা, নাটক, সিনেমা ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। বোহিমিয়ান ধরনের লোকজন পরিবারেই থাকে। নানান ধরনের আচার-আচরণের লোকজন নিয়ে পরিবার। পরিবারের কোনো সদস্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগেন, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাহীন সদস্যদের পরিবারেই বসবাস। পরিবার হলো সেই জায়গা যেখানে স্বস্তি, নিরাপত্তা, দায়িত্ব-কর্তব্য, শান্তিশৃঙ্খলা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসার শুভ সূচনা হয়। চূড়ান্ত বিচারে কোনো পরিবারই নিখুঁতভাবে কাজ করে না। আন্তরিক ভালোবাসা আর ক্ষমা করার মানসিকতা এটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। আগামী দিনের সভ্য এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে পরিবারই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও