বিড়ালকে পেটানো কোনো ছোট অপরাধ নয়

বিডি নিউজ ২৪ মুনতাসির মামুন প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫, ১৭:০৪

নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই লেখাটি অনেকের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কেননা, আমারা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে মৃত্যু শুধুই একটা সংবাদ। বড় বা কেউকেটা কেউ হলে তা শিরোনাম। এর বেশি নয়। সেক্ষেত্রে একটি বিড়ালকে কেউ পেটাল, সেটি নিয়ে আলোড়ন বা প্রতিবাদ অনেকের কাছেই ‘আদিখ্যেতা’ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় আমরা উপেক্ষা করি— যখন কোনো প্রাণীর ওপর নির্যাতন ঘটে, তা যদি ব্যক্তিগতভাবে না-ও ঘটে, তবুও এর প্রভাব সামাজিক ও নৈতিক স্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।


ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি, যেখানে একটি ফ্ল্যাটের পোষা বিড়াল অন্য একটি ফ্ল্যাটে চলে গেলে, সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বিড়ালটিকে রড দিয়ে মারধর করে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, এবং গণমানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের মতো বড় সংবাদমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়। কয়েক বছর আগেও অনেকে হয়তো ভাবতেন না যে একটি বিড়াল নির্যাতনের ঘটনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতে পারে, অথচ এখন ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত পোষা প্রাণী উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে— এমন সংবাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেই দেখা যাচ্ছে।


এটি নির্দেশ করে যে প্রাণীর প্রতি আমাদের মনোভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। এক সময় যেটি ধনী সমাজের ‘আদিখ্যেতা’ বলে ব্যঙ্গ করা হতো, আজ সেই চর্চা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের পরিবারেও দেখা যায়। নগরজীবনে ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান; গুগল ম্যাপে সার্চ করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বাজারে অ্যানিমেল ফুডের সরবরাহ এবং টিনশেডে বসবাসকারী পরিবারেও পোষা প্রাণীর উপস্থিতি, এই পরিবর্তনের সামাজিক দিক নির্দেশ করে।



পাশাপাশি, রাস্তায় থাকা কুকুরদের নিয়মিত খাওয়ানো বা আশ্রয় দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও আজকাল স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আগে যা বিচ্ছিন্ন ছিল, এখন তা নিয়মিত চর্চা। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র সহানুভূতির নয়, এটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ।


আইনি কাঠামো: প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯


বাংলাদেশে প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য ২০১৯ সালে ‘প্রাণী কল্যাণ আইন’ পাশ হয়, যা প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অবহেলাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এই আইনের মূল বিষয়গুলো হলো:


অপরাধের সংজ্ঞা: কোনো প্রাণীকে অযথা কষ্ট দেওয়া, মারধর করা, অবহেলা করা, বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে হত্যা করা আইনের আওতায় অপরাধ।


শাস্তি: দোষী সাব্যস্ত হলে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।


অভিযোগ প্রক্রিয়া: যে কেউ থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করতে পারে, অথবা স্থানীয় প্রাণী কল্যাণ সংগঠনের সহায়তা নিতে পারে।


এই আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনা প্রচারিত হওয়ায় আইন প্রয়োগের চাপ বাড়ছে।


আন্তর্জাতিক প্রভাব: ভিসা ও চাকরির ক্ষেত্রে ঝুঁকি


প্রাণী নির্যাতনের ঘটনা শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুতর পরিণতি বইয়ে আনতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে, ভিসা বা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর ‘চরিত্র মূল্যায়ন’ (Good Character Assessment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণী নির্যাতনের অভিযোগ বা দোষী সাব্যস্ত হওয়াদের ভিসা বাতিল, প্রত্যাখ্যান, বা ইমিগ্রেশন ব্লকের কারণ হতে পারে।


অভিবাসন আইন ছাড়াও, চাকরিস্থলে একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘misconduct’ বা ‘moral turpitude’-এর অভিযোগ উঠলে, কোম্পানির নিজস্ব কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত) অনুযায়ী, কর্মচারীর আচরণ যদি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করে বা নৈতিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও