দুটি ঘটনা ও তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া

বিডি নিউজ ২৪ বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫, ১৭:০১

দুটি ঘটনা সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। প্রথমটি হলো সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন। গত ৭ মে রাতে তিনি থাইল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ৯ মে সকালে, যখন নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা ও সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেপ্তারের মধ্যে কোনো সংযোগ আছে কিনা, তা জানার উপায় নেই। তবে এই ঘটনা দুটোকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তার ফলাফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে।


আবদুল হামিদ বাংলাদেশের রাজনীতির অতি পরিচিত এক মুখ। দীর্ঘসময় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন, পরে রাষ্ট্রপতির মতো সম্মানজনক অবস্থানে থেকেছেন। তিনি কোনোদিনই চরম বিতর্কিত রাজনীতিক ছিলেন না। তার সম্পর্কে আগে কেউ এমন অভিযোগ তোলেনি যে, তিনি দুর্নীতিপরায়ণ, প্রতিশোধপরায়ণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী। বরং তার সারল্য ও সাধারণ জীবনযাপন তাকে অনেকের কাছে এক ধরনের শ্রদ্ধার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হলেও বিদেশযাত্রার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।


একজন প্রবীণ মানুষ, যিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশযাত্রা তার সাংবিধানিক অধিকার। তিনি নিয়মিত বিমানযোগে গিয়েছেন, গোপনে নয়। তার যাত্রার বিষয়টি গোয়েন্দাদের অজানা থাকার কথা নয়। অথচ কিছু সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই যাত্রাকে ‘পলায়ন’, ‘ষড়যন্ত্র’, কিংবা ‘তথ্য লুকিয়ে যাওয়ার’ রূপ দিতে চাইছে। এ ধরনের প্রচারণা সত্যের চেয়ে গুজবের ওপর নির্ভরশীল এবং অন্ধ প্রতিহিংসার প্রকাশ।



এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা। কিন্তু তদন্ত শুরুর আগেই প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন অসুস্থ মানুষ কীভাবে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি’ নিয়ে দেশ ছাড়েন— এই প্রশ্নটিও তো অযৌক্তিক নয়।


আমাদের রাজনীতি ক্রমশ মানবিকতা হারাচ্ছে। আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই, রাষ্ট্রদ্রোহের ইতিহাস নেই, এমনকি কোনো অপকর্মের অভিযোগও কেউ কখনো তোলেনি। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহনশীল ও নীতিনিষ্ঠ পথচলা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষার উৎস হতে পারত।


মানবিক রাজনীতি মানে এমন এক সমাজব্যবস্থা, যেখানে একজন বিরোধীকেও অসুস্থ হলে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া হয়। যেখানে ক্ষমতায় থাকলেও প্রতিপক্ষের সন্তানকে চাকরি দেওয়া হয় যদি সে যোগ্য হয়। যেখানে কেউ ভুল করলে তার জন্য মানবিক পুনরুদ্ধারের সুযোগ থাকে। কিন্তু এখনকার রাজনীতিতে সেই জায়গা কই!


আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা নিয়ে এই হৈচৈ, তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যস্ততার মধ্যে আমরা ভুলে বসে আছি যে একটি সমাজের শক্তি কেবল তার উন্নয়নে নয়, তার উদারতায়। একজন অসুস্থ মানুষকে কীভাবে দেখা হয়, তা দিয়েই একটি রাষ্ট্রের সভ্যতা বিচার করা যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও