
মরে গিয়ে কি বাঁচা যায়?
মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন র্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহা। মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। সেখানে লিখে তিনি নিজের মৃত্যুর দায় নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই বলছেন পলাশ সাহা আসলে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন। সংক্ষিপ্ত চিরকুটটিতে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে যা লিখেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে তিনি মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই কাজ করেছেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, কে কত বেশি দায়ী এই আলোচনায় আপাতত যেতে চাইছি না। তবে একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ কেন এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটাই আলোচনার দাবি রাখে। সম্পর্কের টানাপড়েন এমন একটি মানসিক চাপ, যা মানুষ মেনে নিতে পারেন না। আবার কাউকে সরাসরি দায়ীও করতে পারেন না এবং সমাজের সামনে মুখ খুলতে পারেন না।
এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ব্যক্তি এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে, একসময় নিজেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এটা নিজেকে একধরনের শাস্তি দেয়া। সেই সাথে মৃত ব্যক্তি হয়তো মনেকরেন দ্বন্দ্বের সাথে জড়িত চরিত্রগুলো যদি একটুও শিক্ষা পায়। এই আত্মহত্যার মাধ্যমে পলাশ সাহা পরিবারের প্রতি তার ক্রোধ প্রকাশ করেছেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আত্মহত্যার চিন্তা (Suicidal Ideation) থেকে প্রকৃত আত্মহত্যা পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে। আত্মহত্যা গবেষণার পথিকৃৎ, ড. এডউইন শ্নেইডম্যান অবশ্য মনে করেন, "আত্মহত্যা মানুষের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একটি বিকৃত প্রচেষ্টা।"
শুধু তো পলাশ সাহা নন, বিভিন্ন কারণে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। গত এপ্রিলে রাজশাহী জেলাতেই আত্মহত্যা করেছেন ৩৫ জন। তবে এর বাইরেও আরও অনেকে রয়েছেন, যেগুলো পুলিশের তালিকায় নাই। রিপোর্টটা পড়ার পর থেকেই বারবার ভাবছি এতগুলো বিভিন্ন বয়সের মানুষ এক মাসের মধ্যে জীবনের পরিবর্তে কেন মৃত্যুকে বেছে নিলেন? আমাদের মধ্যে যারা আত্মহত্যা করছেন, তারা আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেন। বিষণ্ণতা থেকে যখন নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয়, আশা চলে যায়, যখন অবলম্বন হিসেবে অন্য কোন উপায় খুঁজে পায় না মানুষ- তখন একমাত্র উপায় হয় নিজের জীবন শেষ করে দেয়া।
অনেক মানুষ এখনো মনে করেন সুইসাইড করাটা স্বার্থপরের মত কাজ। কিন্তু কেন মনে করেন? অনেক রোগী নিজেরাই ডাক্তারকে বলেছেন যে, তারা যখন আত্মহত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তারা তাদের প্রিয়জনদের কথা ভাবেননি। কারণ তখন তাদের কাছে নিজেদের ব্যথাটাই খুব বেশি ছিল। মনে হতেই পারে এটা খুব স্বার্থপরের মতো আচরণ। মানুষ আত্মহত্যা করে শুধু নিজে পালিয়ে বাঁচার জন্য, অন্য কারো জন্য মরে যাওয়াটা সুইসাইড নয়। সে আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই মৃত্যুকে বেছে নেয়।
সমাজবিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন আত্মহত্যা একটি সামাজিক বিষয় বা ফেনোমেনা। প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনা সেদেশেরই সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের মনো-সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। রাজশাহীর আত্মহত্যার তালিকায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখের দিন নন্দনগাছি স্টেশনে ষাটোর্ধ্ব রুহুল আমিনের আত্মহত্যার ঘটনা। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।