
প্রান্তিক থেকে শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও উন্নত করা যায় কীভাবে?
কয়েক দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, টিকাদান কর্মসূচির সফলতা এবং স্বাস্থ্য পরিসেবার বিস্তারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। কিন্তু একটি কাঠামোগত সংকট রয়েই গেছে।
শহর ও গ্রামের মধ্যে প্রকট বৈষম্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (UHC) অর্জনের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আমাদের সামনে এই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে এবং স্পষ্টভাবে গ্রাম ও শহরের জন্য অভিন্ন মডেলের দুর্বল দিকগুলো সামনে হাজির করেছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের মতো কাঠামো থাকলেও এই সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। এক্সেস এখনো অনেক বড় বাধা হিসেবেই রয়েছে। যদিও সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, বাস্তবতা হলো অনেক ক্লিনিকে পর্যাপ্ত জনবল নেই, ওষুধ অপ্রতুল এবং প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক সেবা অনুপস্থিত।
এছাড়া অনেক জায়গায় বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় অবকাঠামো এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে রোগীরা জরুরি ও জটিল সেবার জন্য উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না বা দেরিতে পৌঁছান যা পরিস্থিতিতে আরও কঠিন করে তোলে।
তবে গ্রামীণ এলাকায় একটি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী কাঠামো ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন সাব-সেন্টার এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি পরিপূর্ণ চেইন এখানে কাজ করছে। এই কাঠামোর দুর্বলতা প্রধানত ব্যবস্থাপনাগত। অনুপযুক্ত তদারকি, দুর্বল জবাবদিহিতা, মনিটরিং ব্যবস্থার ঘাটতি এবং নাগরিক সম্পৃক্ততার অভাব বিদ্যমান শক্তিশালী অবকাঠামোর কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।
স্বাস্থ্য কমিশনের মতে, এই কাঠামোকে কার্যকর করতে হলে কর্মীদের পারফরম্যান্সভিত্তিক প্রণোদনা দিতে হবে, ই-হেলথ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উপস্থিতি ও সেবার গুণমান তদারকি করতে হবে এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সেটা কতটুকু সম্ভব সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অন্যদিকে, শহুরে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সমস্যা একেবারেই ভিন্ন। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি, বৈষম্য প্রকট এবং রোগের প্রকৃতিও ভিন্ন। শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত বস্তিবাসীরা অনেক সময়ই সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকেন।
বেশিরভাগই অপ্রশিক্ষিত (untrained) ও অনানুষ্ঠানিক (informal) স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর ওপর নির্ভর করেন। আর এতে অনেক সময় অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে যায়। কারণ এই ধরনের সেবার মান নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
অপরদিকে, উচ্চবিত্তরা ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ফলে শহরে একটি দ্বৈত স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো গড়ে উঠেছে।
এই বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ শহরের স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনার দ্বৈত প্রশাসনিক কাঠামো। শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (MOHFW) পরিবর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (MOLGRD) আওতায় সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইতিবাচক দিক
- স্বাস্থ্য খাত