সূর্যের আগুন বেশি ভয়ংকর, না রাজনীতির

www.ajkerpatrika.com আহমেদ শমসের প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৫, ০৯:৩২

মে মাসে সূর্য যেন শুধু তাপ নয়, আগুন ছড়াচ্ছে। আকাশ থেকে যেন নেমে এসেছে মাথার ওপর, ওপর থেকে ঢুকে গেছে, যাচ্ছে ভেতরে। শহরের রাস্তায় আগুনের মতো উত্তাপ, গ্রামগঞ্জে পানির জন্য হাহাকার। শিশুরা ঘুমাতে পারছে না, ছটফট করছে, কৃষকের কপাল শুকনো, হাঁসফাঁস করছেন বয়স্করা। সবাই খুঁজছে একটু শীতল হাওয়া, দুদণ্ড শান্তি! এই গরম যেন কেবল আবহাওয়ার ব্যাপার নয়; হয়ে দাঁড়িয়েছে একধরনের জীবনযুদ্ধ, প্রতিদিনের বাস্তবতা।


তবে শুধু সূর্যকে দোষ দিলে ঠিক হবে না। এই উত্তাপের পাশে আরেক রকম গরমও আছে—রাজনীতির গরম। যমুনা ঘেরাও, শাহবাগে ব্লকেড, দেশের বিভিন্ন রাস্তায় অবরোধ-বিক্ষোভ, মানুষের ওপর দমন-পীড়ন, বিভাজনের রাজনীতি। প্রশ্ন উঠতে পারে, দুই আগুনের মধ্যে কোনটা বেশি ভয়ংকর?


প্রাকৃতিক গরমে মানুষ হিট স্ট্রোকে মারা যায়, অসুস্থ হয়। কিন্তু রাজনীতির গরমে? তখন মানুষ কেবল মরেই না, একে অপরকে মেরেও ফেলে। সূর্যের উত্তাপ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু রাজনীতির উত্তাপ তো আমাদেরই বানানো। সেটাকে তো চাইলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আসলে আমরা যেন কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। অথবা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজে থাকতে চাই নিয়ন্ত্রণহীন!


প্রকৃতির গরম যেমন কষ্টদায়ক, রাজনীতির গরম তেমনি ভয়ানক। শহরে কিংবা দেশজুড়ে যদি পর্যাপ্ত গাছ থাকত, ছায়া থাকত, পানি থাকত, বিদ্যুৎ থাকত—তবে কি গরম এত ভয়ানক লাগত? জলবায়ু পরিবর্তন হঠাৎ আসেনি, এটা বছরের পর বছর ধরে হয়েছে। কিন্তু আমরা পরিকল্পনা করিনি, গাছ কেটেছি, নদী ভরাট করেছি, জলাধার দখল করেছি। সবকিছু দখলে সুখ নেই, দখলের সুখ যে সাময়িক—তা-ও আমরা বুঝতে চাইনি, চাই না।



পরিবেশ নিয়ে যে আন্দোলন হয়, সেগুলোও নানা সময় দমন করা হয়। কার্যকর পরিবেশনীতি তৈরি করা হয়নি। তাই আজকের এই ভয়াবহ গরমের পেছনে রাজনীতির গাফিলতিও আছে, হাত আছে অপরাজনীতির।


সূর্যের উত্তাপ অস্বস্তি দেয়, শরীরে জ্বালা ধরায়। আর রাজনীতির উত্তাপে? রাজনীতির উত্তাপ তো শুধু অস্বস্তিকর নয়, সেটা কখনো কখনো মানুষও মারে, সমাজকেও ভেঙে দেয়। পরিবারে মতভেদ, বন্ধুত্বে ফাটল, সমাজে বিভক্তি—সবই এর ফল। যেখানে সহনশীলতা নেই, সেখানে রাজনৈতিক উত্তাপ মানেই হিংসা, অনাস্থা আর ভয়।


সূর্যের গরম কষ্টদায়ক, কিন্তু তা সাময়িক। অথচ রাজনীতির গরম বহু বছর, বহু প্রজন্ম ধরে ক্ষতি করে যায়। গুজরাট বা দিল্লির দাঙ্গা হঠাৎ হয়েছিল, কিন্তু তার ক্ষত আজও আছে। আমাদের দেশেও রাজনৈতিক সংঘাতে শুধু মৃত্যু নয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা সমাজকে দুর্বল করে।


তাই এই প্রশ্নটা কেবল আবহাওয়ার নয়, বরং রাষ্ট্র আর নাগরিকদের সচেতনতার প্রশ্ন। রাষ্ট্র কি এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারে? তৈরি হয়নি। তবে আমরা এমন রাজনীতি তৈরি করেছি, যা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো মানুষের জীবনে কষ্টকে স্থায়ী করছে।


এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ভয় দেখানো নয়। বরং বোঝানো যে প্রকৃতিকে আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু রাজনীতিকে ঠিক করতে পারি। পরিবেশ বাঁচাতে যেমন সচেতনতা দরকার, তেমনি রাজনীতিকে মানবিক করতে দরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জবাবদিহি আর বিকল্প কণ্ঠস্বর।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও