কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন চাষে

বণিক বার্তা খুশি কবীর প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২৫, ০৯:০৩

এ সম্মেলনের মূল বিষয় হলো কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি। কৃষি উৎপাদন নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, কৃষি আমাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আমাদের জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশ কৃষি খাতে কাজ করছে। এর অর্থ, বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও বাস্তবে এ খাতে ঠিক কতজন কাজ করছে তার পুরো চিত্র তথ্যে পাওয়া যায়নি। পরিসংখ্যানগুলোয় নারী কৃষকদের তথ্য অনেক সময় আসে না। কারণ ধরে নেয়া হয় বাড়ির প্রধান পুরুষ হলেন কৃষক। কিন্তু নারীও নিজের জমিতে, পারিবারিক জমিতে সরাসরি কৃষিতে যোগ দিচ্ছেন এবং বহু নারী কৃষি শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন। জাতীয় পরিসংখ্যানে এসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রায় ৫০ ভাগ বা তার বেশি মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে আমার মনে হয়।


তবে কৃষির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত এবং কৃষির জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয় হলো ভূমি। অথচ এ দেশে ভূমির ব্যবহার ও বন্দোবস্ত নীতিমালা, ভূমির রেজিস্ট্রেশন সবকিছু এখনো অনেক ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে ডিজিটালাইজ করার জন্য, কিন্তু সেখানেও সমস্যা আছে। কমবেশি সবাই জানে কোর্টে থাকা অধিকাংশ মামলাও ভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত। অথচ কৃষির নির্ভরশীলতা ভূমির ওপরই। এ সম্মেলনের প্রধান বিষয় কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি। এ দুটোকে অগ্রাধিকার দিতে হলে তথা উৎপাদন ও ভূমির উৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিতে কার্যকর নীতিমালা খুবই প্রয়োজন।


বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আগে এক ফসলের জমি ছিল। এক ফসলি জমির অনেকগুলোয় সরকার নিজে এবং কিছু দাতা সংস্থার সহযোগিতায় বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করেছে। দেশের প্রায় অধিকাংশ ভূমি এখন আর এক ফসলি নয়, তিন ফসলি জমি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই জাতিসংঘের কৃষি সংস্থা এফএওর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে আমরা পৃথিবীতে কৃষি উৎপাদনে ১৪তম অবস্থানে রয়েছি। এখন ধান উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের জন্য অনেক কিছু—সবজি, তরমুজ, মিষ্টি কুমড়ো, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়।



আমরা জানি যে প্রাণ-প্রকৃতির জন্য পাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ফসল। কিন্তু বর্তমানে পাটের উৎপাদন কৃষকরা কমিয়ে দিয়েছেন। যদিও পাট মাটির উর্বরতা আরো বাড়ায় এবং আমাদের দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা য় এটি খুবই প্রয়োজনীয়। একসময় আমাদের দেশ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাট উৎপাদন স্থল। বাংলাদেশ যখন তৎকালীন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তখন পাকিস্তানও পাটের ওপরই নির্ভর ছিল। কিন্তু এখন সেই পাটের প্রধান রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ নয়। পাট রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে ভারত। এমনকি যে পাট সবচেয়ে উন্নতমানের ছিল, সেটাও এখন আমাদের দেশে আর নেই। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।



প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপারে আমাদের দেখতে হবে যে যখন আমরা উৎপাদন করছি, কার জন্য ফসল ফলাচ্ছি। কৃষকরা সাধারণত নিজের জন্য নয়, বাজারের জন্য ফসল উৎপাদন করে। কৃষি সার্বভৌমত্বের বিস্তারিত আলোচনায় যাব না তবে কৃষি সার্বভৌমত্ব বলতে আমি বুঝি, আমরা যেন এমনভাবে উৎপাদন করতে পারি যার মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব। এ কারণে আমরা কী উৎপাদন করব সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেক জায়গায় তামাক চাষ করা হচ্ছে। এ তামাক চাষ প্রাণ-প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর—একদিকে জমির ক্ষতি হয়, অন্যদিকে কৃষকদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আমাদের কিছু নিয়মনীতি করা দরকার যার মাধ্যমে কৃষককে উৎসাহিত করা হবে তারা যেন এমন চাষ করে যা আমাদের পরিবেশ, মাটি, পানি, বায়ু কোনোটির ক্ষতি করবে না এবং আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টিতে যেন তারা আরো বেশি প্রাধান্য দেন।


এক্ষেত্রে কৃষকের অভিগম্যতা হচ্ছে শুধু উৎপাদন করা। সে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে না, কী উৎপাদন করবে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করছে না। এগুলো কৃষকের হাত থেকে চলে গেছে সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির হাতে, বাজারের হাতে। এখন আমাদের এ দুটোর সমন্বয় কীভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা হলুদ, আদা, রসুন মসলা উৎপাদন করছি এবং এগুলো রফতানিও করা হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে যা কিছু উৎপাদন করা সম্ভব আমরা সেটা করছি। পাশাপাশি যিনি উৎপাদন করছেন তাকেও উপেক্ষা করা যাবে না। বিশেষত আমি মনে করি, যারা উৎপাদন করছেন তাদের মধ্যে নারী কৃষকের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। ক্ষেত মজুররা এখানে কাজ করছেন, শ্রম দিচ্ছেন। তাদেরও একটা বক্তব্য থাকতে হবে যে কী করছি, কার জন্য করছি এবং মজুরি কত হওয়া উচিত। এগুলো একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও