
বন্ধ হচ্ছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকিরের পিটিআই প্রকল্প
বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সরকারের কাছে নিজের ও আত্মীয়-স্বজনদের জমি বিক্রির পরিকল্পনা করে নিজ এলাকায় একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এটি স্থাপিত হলে অন্য জমির দামও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ নানাভাবেই লাভবান হবেন প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোকজন। এমন ষড়যন্ত্রের সত্যতা মেলায় অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্প শেষ করা হচ্ছে। তবে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বরাবরের মতোই থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেননা পরিকল্পনা কমিশন থেকে শুধু প্রকল্প বাতিল করেই দায় সাড়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, পরিচালনা এবং অর্থ বরাদ্দে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে সত্যিকার জনগণের স্বার্থে নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে প্রকল্পগুলো হতে নিয়েছে পতিত সরকার। এই কার্যক্রমের মধ্যেই ধরা পড়ে ‘কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী পিটিআই স্থাপন’ প্রকল্পটি। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু শুরু থেকেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয় তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের আমলে এডিপি সংশোধনের জন্য প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো টাকা খরচ হয়নি।
এ অবস্থায় ৪ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। এটি পাওয়ার পর গত ১ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এসব চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৩ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা কমিশনকে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রকল্প ঘিরে নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশঙ্কার খবর আসে কমিশনের কাছে। সেসব যাচাই বাছাই করে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশেষ করে ওই স্থানে নতুন একটি পিটিআই এর প্রয়োজন আছে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এজন্য সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয়ের হাত থেকে বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নিড অ্যাসেসমেন্ট করে দেখা হবে যদি সত্যিকার অর্থেই সেখানে পিটিআই স্থাপন করা প্রয়োজন, তাহলে আন্তর্জাতিক মানের একটি পিটিআই স্থাপন করা হবে। কিন্তু আপাতত চলমানটি বন্ধ করা হচ্ছে।]
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- পিটিআই
- প্রকল্প বাতিল
- জাকির হোসেন