অতিক্রান্ত মা দিবস ও মা

বিডি নিউজ ২৪ অজয় দাশগুপ্ত প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৫, ২০:১০

আমরা এমন এক দেশের মানুষ যেখানে মাকে সবার ওপরে জায়গা দেয়া হয়। এখনো বেশিরভাগ পরিবারে মায়েরা সংসার সামলাতে গিয়ে বাইরে কাজ করতে পারেন না বা করেন না। হয়তো সে অর্থে তারা উপার্জনে নেই। কিন্তু তাদের কাজ আর সংসারের দায়িত্ব যে কি বিশাল আর কতটা ফলপ্রদ সেটা বলারও দরকার পড়ে না। তাই তারাই ঘরে ঘরে কর্ত্রী। শুধু কর্ত্রী বললে ভুল বলা হবে আপদে-বিপদে আমার মতো অনেকের পরিবারে তারাই ভরসা। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে মা যা বলতেন সেটাই ছিল চূড়ান্ত। ব্যাংক অফিসার পিতা কাজ আর টাকা এনে বুঝিয়ে দেয়াতেই খালাস। কারো অসুখ হলে রাত জাগা, শিয়রে বসে থাকা, কে কখন কী খাবে, কখন কার কত টাকা লাগবে সবকিছু ছিল মায়ের নখদর্পণে। মায়েরা যে পরিবারে চায় বা ইচ্ছুক সে পরিবারের সন্তানরাই মেধাবী আর শিক্ষিত হয়ে ওঠে। মা এবং নারী সংসারে এক অভিন্ন সত্তা।


সংসারের কাজগুলোকে যারা কোনো কাজ মনে করেন না তাদের জন্য একটা গল্প বলি। আমরা যারা অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন নিয়ে আসি বা যারা কোনো একসময় নাগরিক হবার সুযোগ পাই তাদের একটা টেস্ট দিতে হয়। এখন কী নিয়ম জানি না, কুড়ি বছর আগে আমাদের সময় মৌখিকভাবেও পরীক্ষা দিতে হতো। যার পোশাকি নাম ইন্টারভিউ। সে যাত্রায় আমার এক বাঙালি মেধাবী বন্ধু ইন্টারভিউয়ের পর ডাহা ফেইল। তাকে আবার যেতে হবে টেস্ট দিতে। সে জানতে চেয়েছিল কসুর কোথায়? কী এমন ভুল বলেছে যার জন্য তাকে নাগরিকত্বের টেস্টে ফেল করতে হলো। ওদিকের সাদা মানুষটা হাসতে হাসতে বলেছিল, তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম তোমার স্ত্রী কী করেন? তুমি নিস্পৃহভাবে উত্তর দিলে, কিছুই না, আমার দুই সন্তানের দেখভাল করে। এই উত্তরটা মারাত্মক। তোমার কোনো ধারণা নেই মায়ের কাজ কত কঠিন আর তার শ্রমফল যোগ করলে তোমার বেতনের বেশি বৈ কম হবে না। এই কারণে তুমি পাশ করোনি। আমরা হয়তো ভাবি খালি আমরাই মাকে শ্রদ্ধা করি, ভুল। এসব দেশে আমাদের মতো আবেগ বা ভাবাবেগের কমতি মনে হলেও এরা মাকে আমাদের চাইতে কম ভালোবাসে না।


একটা বিষয়ে আমরা গর্ববোধ করি এই বলে যে আমাদের কোনো মা দিবস লাগে না। আমরা মা দিবসে বন্দি নই। এটা কথা হিসেবে ঠিক। কিন্তু আমাদের নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনকে পাশাপাশি রাখলেই আপনি বুঝবেন কেন দিবস দরকার। কর্মপ্রবাহের জীবনে পাশ্চাত্যে একটা দিন বের করাও কঠিন। তাই সপ্তাহান্তের একটি দিনে বছরে একবার মাকে মনে করার এই রীতিতে বাণিজ্যবুদ্ধি থাক আর যাই থাক মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া হয়, ভুলে যেও না আজকের দিনটি শুধু তোমার মায়ের জন্য।



একবার ভাবুন তো রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র থেকে সর্বত্র মা দিবসের জমজমাট আয়োজন আছে বলেই আপনার সন্তান আজ ঘরে বসে আপনাকে তার হাতে আঁকা ছবি দিয়ে চমকে দিচ্ছে। আপনি যা ভাবেননি তেমন কোনো আয়োজন করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। জীবনে এমন কিছু জিনিস বা শখ আছে নানা কারণে সংসারের দায় মেটাতে গিয়ে পূর্ণ হয়নি তেমন একটি উপহার দিয়ে আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা ভালোবাসার আপনি।


মাকে নিয়ে যতগুলো গল্প আছে তার ভেতরে বহুল পঠিত এই গল্পটি এখনো সেরা–


ভাবী স্বামীকে একটাবারের জন্য পরীক্ষা করে নিতে চাইল সে। তাই মেয়েটি বলল তার প্রেমিককে, তুমি তো আমায় বেশি ভালবাসো না। তুমি তো তোমার মাকেই ভালবাসো। ছেলেটি আকাশ থেকে পড়ে বলল, না গো। আমি মাকেও ভালবাসি আবার তোমাকেও খুব ভালবাসি। কিন্তু মেয়েটির শুধু এই কথাতে মন গলবে কীভাবে! তাই সে সরাসরি বলল, আমাকে তুমি বোঝাও যে, তুমি তোমার মায়ের থেকেও আমাকে বেশি ভালবাসো। ছেলেটি পড়ল বেজায় ফাঁপড়ে। সে বলল, আচ্ছা বাবা, বলো তোমার জন্য কী করতে হবে? মেয়েটি তখন বলল, তুমি তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা কেটে নিয়ে এসে আমার হাতে দাও। তাহলেই বুঝব যে, তুমি তোমার মাকে নয়, আমাকেই বেশি ভালবাসো। ছেলেটি যে তখন প্রেমে পাগল। বলল, আচ্ছা, তুমি যখন চাইছ, তাহলে তাই হবে। তাই ছেলেটি চলল তার বাড়িতে। আর ছুরি বসিয়ে দিল মায়ের বুকে। মারা গেল ছেলেটির মা। ছেলেটি তখন মায়ের হৃৎপিণ্ডটা খুবলে নিয়ে বেরিয়ে আসতে গেল ঘর থেকে। যাতে তার প্রেমিকাকে সে এবার বিয়ে করতে পারে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় ছেলেটি দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেল। আর তার হাত থেকে মায়ের হৃদপিণ্ডটা ছিটকে পড়ে গেল দূরে। ছেলেটি সামলে নিয়ে উঠতে উঠতে শুনতে পেল, ওই হৃদপিণ্ডটা বলছে, ‘আহা রে খোকা তোর লাগেনি তো?’


গল্পটা কি আসলেই খালি আবেগপ্রসূত? সারা দুনিয়া তখন করোনাভাইরাসের ভয়ে কাবু। কেউ কারো কাছে যায় না। কারো পাশ ঘেঁষে না। সে সময়কালেও কি কোনো মা আছেন যিনি সন্তানকে দুধ পান করাননি? এমন কোনো মা আছেন যার সন্তান অসুস্থ বোধ করলে পালিয়ে গেছেন? বরং আমরা খবরে দেখেছি সবাই চলে গেলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে ছেড়ে যাননি মা। মা তো এমন-ই যাকে আপনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারেন। আমরা যারা বয়সকালে মাতৃহারা তারা যেমন এখন শুধু খুঁজে বেড়াই, যারা জন্মের সময় বা শৈশবে মা-হারা তারাও কিন্তু তাই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও