আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে আমাদের কতটা ক্ষতি হবে

প্রথম আলো ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ১১:১৬

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা অনেকখানি ফিরে এসেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে এপ্রিল মাসের শেষে গ্রস রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক—নিজেদের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সহায়তা দিতে হয়নি।


বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে টাকা ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেওয়ায় ওগুলোও দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে হয়তো রক্ষা পেয়ে গেছে। এরপরও কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এখনো খুবই কাহিল। সেগুলোকে মার্জারের মাধ্যমে বড় কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রক্রিয়া  এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুর ইতিমধ্যেই কয়েকবার আশ্বাস দিয়েছেন, এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে কোনো অসুবিধে হবে না। ওপরে আর্থিক খাতের যে চিত্র তুলে ধরা হলো, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।


গত ৯ মাসে দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে। পরিবর্তনের এই ধারা অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে পড়তে শুরু করলেও আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি সাফল্য বয়ে এনেছে। একটি অর্থনৈতিক ‘মেল্টডাউন’ থেকে জাতি রক্ষা পেয়েছে। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ আশকারা পেয়ে গত এক দশকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের অর্থনীতিতে এক নম্বর সমস্যায় পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক উন্নয়নের খেসারত হলো ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণের সাগরে জাতিকে ডুবিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভুয়া বয়ান সৃষ্টির পাশাপাশি বেলাগাম পুঁজি লুণ্ঠন ও বিদেশে পুঁজি পাচারের এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড সৃষ্টি।


২০২৪ সালের ৭ আগস্ট বণিক বার্তার শিরোনাম খবরে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ওই বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার দিন বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এর মানে, এই দুই ঋণের স্থিতির অঙ্কের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।



গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগে হাসিনা এই সুবিশাল ঋণের সাগরে দেশের জনগণকে নিমজ্জিত করে গেলেন। আর যাওয়ার আগপর্যন্ত প্রতিবছর মাথাপিছু জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে চলেছিলেন। হাসিনার শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার অজুহাতে প্রতিটি মেগা প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন থেকে চার গুণ বেশি দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখো কোটি টাকা। গত সাড়ে ১৫ বছর ছিল দেশে দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠনের মহোৎসবকাল।


শ্বেতপত্র কমিটি দেখিয়েছে, স্বৈরশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুণ্ঠিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংকিং ও ফিন্যান্সিয়াল খাত, তারপর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, তারপর ভৌত অবকাঠামো খাত এবং এরপর তথ্যপ্রযুক্তি খাত। দেশের বিনিয়োগ ও রাজস্ব আহরণকে এরা দুর্বল করে ফেলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নামিয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনকে তছনছ করে দিয়েছে।


সম্প্রতি ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার আইএমএফের ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, আইএমএফ দুটি শর্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানে অসন্তুষ্ট। প্রথমটি হলো ডলারের বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করে ফেলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি নয়। দ্বিতীয়টি হলো সরকারি রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতকে বর্তমান সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সরকারের অনাগ্রহ।
ডলারের দামকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে ওই বাজারের ম্যানিপুলেটর ও অ্যাগ্রিগ্রেটরদের তাণ্ডবে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে বাড়তে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তারা এখনই ডলারের দামকে বাজারভিত্তিক করে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো ডলারের দাম নিয়ে সংকট ডেকে আনতে চায় না। পাকিস্তানে এখন ১ ডলারের দাম ২৮০ রুপি এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি। এর বিপরীতে বাংলাদেশে ১ ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা গেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও