উত্তরাঞ্চলের খরা পরিস্থিতি এবং করণীয়

কালের কণ্ঠ বিধান চন্দ্র দাস প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ১১:০৫

ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে খরা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা—যখন দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হয় না কিংবা খুব কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানির ঘাটতি দেখা দেয়, ফসল নষ্ট হয়, নদীর পানি কমে যায় এবং মাটির আর্দ্রতা ও ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ হ্রাস পায়। প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণেই খরা হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) পৃথিবীতে জন্ম হওয়ার আগ থেকেই অর্থাৎ দু-তিন লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে খরা হতো। ‘আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া তত্ত্বে’ (আউট অব আফ্রিকা থিওরি) বলা হচ্ছে, ৬০ থেকে ৯০ হাজার বছর আগে খরার কারণে আফ্রিকা থেকে মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সর্বশেষ ডিএনএ বিশ্লেষণ অনুযায়ী (২০১৯) বেশির ভাগ গবেষক এখন একমত যে আফ্রিকা মহাদেশেই মানুষের প্রথম উৎপত্তি হয়েছিল এবং সেখান থেকেই মানুষ অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল (নেচার ২০১৯ : ৫৭৫; ১৮৫-১৮৯)।


গত শতকের তৃতীয় দশকের শেষের দিকে (১৯২৮-১৯৩০) উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম চীনে খরার কারণে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। খরাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন, ইউএনসিসিডির (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টিফিকেশন) হিসাব (২০২২) অনুযায়ী ১৯৭০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত শুধু খরার কারণে পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও : ২০২১) পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে পৃথিবীতে বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ খরার কারণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কয়েক বছর আগে ইউনিসেফ (২০১৯) থেকে বলা হয়েছিল, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী খরার মুখোমুখি হবে। ডব্লিউএমওর (ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন : ২০২১) প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীতে খরাজনিত কারণে মোট মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে থাকে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে।



বাংলাদেশে খরা প্রায়ই সংঘটিত হয়, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চল তথা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও খরার বিস্তৃতি ঘটছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক দুটি জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ মোট ১৩ বার ব্যতিক্রমী খরায় আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে বন, মৎস্য, কৃষি এবং এসবের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের অর্থনীতিতে গভীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।


অস্বীকার করার উপায় নেই যে খরা প্রাকৃতিক কারণে সংঘটিত হলেও এর তীব্রতা, স্থায়িত্ব, ঘন ঘন হওয়া ইত্যাদি বিষয় মূলত মানবসৃষ্ট কারণেই হয়ে থাকে।


বাংলাদেশেও এটি ঘটেছে। গত জানুয়ারি (২০২৫) মাসে এলসিভিয়ার গ্রুপের ক্লাইমেট সার্ভিসেস জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সৃষ্ট খরার তীব্রতার জন্য শুধু বৃষ্টি দায়ী নয়, বরং এই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি, খাল ও নদীতে স্রোতের অভাব, উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব, বন উজাড় ইত্যাদি কারণও দায়ী। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এগুলো মূলত মানবসৃষ্ট কারণেই ঘটেছে।


 রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বেশির ভাগ এলাকা এবং নাটোরসহ রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার কিছু এলাকা নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল গঠিত। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অত্যন্ত রুক্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বরেন্দ্র অঞ্চলের পানিসংকটের জন্য বিবিসির কাছে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন (২৪ জুন ২০২৪)। এগুলোর সারমর্ম হচ্ছে : আগে এই অঞ্চলে শুধু একটি ফসল আমন ধান চাষ করা হতো। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে এই এলাকায় তিনটি ফসল চাষ করা হচ্ছে। আগের মতো বৃষ্টিপাতও হচ্ছে না। আশি-নব্বইয়ের দশকের তুলনায় পরের দুই দশকে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এখানকার ভূমির উচ্চতা নদীর তুলনায় বেশি হওয়ায় যেটুকু বৃষ্টি হয়, তা দ্রুত গড়িয়ে নদীতে চলে যায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পুনর্ভরণ হয় না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও