অশান্ত দক্ষিণ এশিয়া ও আল্লামা ইকবালের চিন্তা

যুগান্তর ড. মাহফুজ পারভেজ প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৫, ০৯:৩৫

রাজনৈতিক লালসা, ধর্মীয় উগ্রতা ও জাতিগত ভেদনীতির কারণে তীব্র হিংসায় আবর্তিত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশ। গুজব, সন্দেহ, ষড়যন্ত্র, সংঘাত, নিপীড়ন তো আছেই, চলছে যুদ্ধের মহড়াও।


একদা ‘হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন-শক-হুন-দল পাঠান, মোগল এক দেহে হলো লীন’ হয়ে বিশ্বসভ্যতার অপার বিস্ময় রচনা করেছিল, সেখানে এখন ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাত, ধর্মীয় মৌলবাদের হুংকার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির মচ্ছব। ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত হয়ে ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা ও নিষ্পেষণের অবর্ণনীয় বর্বরতা ছড়িয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে বহুমাত্রিক, বহুভাষিক, বহুধর্ম, বহুস্বরের মিলনস্থল এ উপমহাদেশে।


গঙ্গা-যমুনা মৈত্রীর আবহ তছনছ করে উন্মত্ততা, মিথ্যাচার ও জবরদস্তির তাণ্ডবে উপমহাদেশ যখন ঘৃণা বা ‘নফরতের বাজারে’ পরিণত হয়, তখন রক্তপিপাসু-হিংস্র শাসকের বিরুদ্ধে মহত্তম মানুষেরা ‘মহব্বতের সওদা’ বা ‘ভালোবাসার পণ্য’ নিয়ে উপস্থিত হন এবং বিভাজনের রক্তনদীর ধ্বংসাত্মক গতি থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেন মিলন ও সম্প্রীতির শক্তিতে। ব্রিটিশ ত্রাসে ছিন্নভিন্ন দিল্লিতে প্রেমের বার্তা দিয়েছিলেন মীর্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব।


ভারতীয় সমাজের হানাহানি ও সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন সন্ত কবীর, তুলসী দাস, নানক। উপমহাদেশের দুই সমৃদ্ধ ভাষা যথাক্রমে বাংলা ও উর্দুতে মানবতার জয়গান গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও আল্লামা ইকবাল। দেশবিভাগের সংকুল পরিস্থিতিতে মানবিক আর্তি জাগিয়ে ছিলেন হাসরাত মাহানী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাদত হাসান মান্টো, ফয়েজ আহমাদ ফয়েজ, কৃষাণ চন্দ।



সাতচল্লিশের রক্তমথিত বিভাজনের আশি বছর হতে চললেও বিভেদ-বিভক্তি মোটেও কমেনি। বরং উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পাল্লায় পড়ে আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, মিলন ও সম্প্রীতির বরপুত্রদেরও প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক আইকন এবং মানুষ ও মানবতার কণ্ঠস্বর গালিবকে বলা হচ্ছে শুধুই উর্দু-ফারসি কবি, রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু আর নজরুলকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কবি। ইকবাল, যার সাহিত্য স্পর্শ করেছে ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ সমগ্র উপমহাদেশ, তাকেও গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে। আমজনতাকে রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার ও ঘৃণার মাধ্যমে নেতিবাচক পরিসরে পাঠিয়ে মানুষ ও মানবতার কণ্ঠস্বর থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ পড়লে নজরুল পড়া যাবে না, গালিব বা ইকবালের সুষমায় স্নাত হওয়া যাবে না, এমনই এক কূপমণ্ডূক আবহ তৈরি করা হয়েছে রাজনৈতিক লালসা, ধর্মীয় উগ্রতা ও জাতিগত ভেদনীতির মাধ্যমে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার নান্দনিক দর্শন ও সুললিত সাহিত্য কখনোই অনুধাবণ করা সম্ভব হবে না এবং মানবিকবোধ জাগ্রত করা যাবে না গালিব, ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখকে বাদ দিয়ে। বিশেষত অশান্ত দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি, স্থিতি, সম্প্রীতি ও মানবিকতার নবজাগরণের জন্য তাদের জীবন ও কর্ম অধ্যয়ন ও আত্মস্থ করা জরুরি।


২১ এপ্রিল ছিল উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী আল্লামা ইকবালের (১৮৭৭-১৯৩৮) মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, দার্শনিক, ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। ১৯৩৮ সালে, ব্রিটিশ আমলে ও পাকিস্তান সৃষ্টির আগে, ৬০ বছর বয়সে ইকবালের মৃত্যু শুধু একজন কবির জীবনাবসানের নয়-তা ছিল এক আলোকিত যাত্রার সমাপ্তি, যা কবিতার গণ্ডি ছাড়িয়ে দর্শন, আধ্যাত্মিকতা ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গভীরভাবে প্রোথিত। পাকিস্তানে বহুলভাবে চর্চিত হলেও তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র দেখে যেতে পারেননি। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ। ইকবালের কৃতিত্ব হলো তার কবিতা এখনো পাঠককে নাড়া দেয়। Poet of The East ইকবালের প্রেরণা পরবর্তী প্রজন্মের হৃদয়ে দিয়েছে বিপ্লবের শক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় দিয়েছে নতুন মাত্রা। আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানা প্রান্তের চিন্তকদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। খোদ সৈয়দ আলি খোমেনি ১৯৮৬ সালে ঘোষণা করেন : ইরান ইকবালের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমরা তার দেখানো পথে হাঁটছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও