অপরাধপ্রবণ মন ও মানসিকতা

ঢাকা পোষ্ট বশীর উদ্দীন খান প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৫, ০৯:৩৩

জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষাগুলোর মধ্যে একটি। এ কারণেই অপরাধমুক্ত সমাজের প্রত্যাশা মানুষের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, বাংলাদেশের মতো দেশে পরম আকাঙ্ক্ষিত অপরাধমুক্ত জীবন পাওয়া শুধুমাত্র দুরূহই নয়, বরং প্রায় অসম্ভব। এর একটি কারণ হলো মানুষের মধ্যে বিরাজমান অপরাধপ্রবণ মানসিকতা।


এই মানসিকতা হঠাৎ করে গড়ে ওঠে না। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার যে বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, সেই সব পর্যায়ের অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশের সম্মিলনে মানুষের মানসিকতা গঠিত হয়। আর যখন এই মানসিকতা মানুষকে অপরাধ করতে প্ররোচিত করে, তখন সেই মানসিকতাকে আমরা অপরাধপ্রবণ মানসিকতা বলে থাকি।


আইনের ভাষায় এ বিষয়টি বোঝাতে ‘মেন্স রিয়া’ (Mens Rea) নামক একটি ল্যাটিন প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়, যা কোনো ব্যক্তির অপরাধ করার ক্ষেত্রে দোষপূর্ণ মানসিকতাকে নির্দেশ করে। কোনো ব্যক্তির ওপর শাস্তিমূলক দায় আরোপ করার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়।


বাংলাদেশে ক্রমাগত অপরাধের ঊর্ধ্বগতি এবং অপরাধের বহুমাত্রিক উপস্থিতির কারণে অপরাধপ্রবণ মানসিকতার কারণ অনুসন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে, এই প্রবন্ধে অপরাধপ্রবণ মন ও মানসিকতার আইনি ব্যাখ্যায় না গিয়ে অপরাধমূলক মানসিকতা গড়ে ওঠার পেছনের বিভিন্ন কারণ আগ্রহী পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।


শৈশবকালীন ট্রমা এবং পারিবারিক কাঠামোর প্রভাব


শৈশবে শিশুরা যদি পারিবারিক পরিসরে নানাবিধ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অভাব-অনটন, পরিবারের কোনো সদস্যের মাদকাসক্তি, পরিবারের কারও কারাবন্দি থাকা কিংবা পিতামাতার বিচ্ছেদ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে, তাহলে তাদের মধ্যে শৈশবকালীন ট্রমা রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।



এই ট্রমার প্রভাবে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অপরাধ করার মনোবৃত্তি দেখা দিতে পারে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হওয়ায়, বড়দের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের প্রভাব তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রকাশ পায়। কোনো অপরাধ যদি নিয়মিতভাবে সংঘটিত হতে হয়, তাহলে তার জন্য যে অপরাধপ্রবণ মনোবৃত্তি প্রয়োজন, এই ধরনের পারিবারিক কাঠামো কিংবা শৈশবকালীন ট্রমা সেগুলো জাগিয়ে তুলতে পারে।


গবেষণায় দেখা যায়, নিরাপদ শৈশবের তুলনায় শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন কিংবা ট্রমার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা পরবর্তীতে তুলনামূলকভাবে বেশি অপরাধপ্রবণ মানসিকতা ধারণ করে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এছাড়া, পারিবারিক সহিংসতা এবং অভিভাবকদের অবহেলা বা নিষ্ঠুরতাও শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে অপরাধপ্রবণ করে তুলতে পারে।


সামাজিক পরিবেশের প্রভাব


গবেষণা থেকে প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায়, শিশুকাল থেকে যে এলাকা বা সামাজিক পরিবেশে মানুষ বসবাস ও বিচরণ করে, সেই পরিবেশের প্রভাব তাদের মধ্যে অপরাধমূলক মানসিকতা গড়ে তুলতে পারে। দরিদ্র এলাকা, বিশৃঙ্খল পরিবেশ, মাদকের সহজলভ্যতা, পতিত ভবনসমৃদ্ধ এলাকা এবং যেখানে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কম, সেই ধরনের এলাকায় বেড়ে ওঠা মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশি অপরাধপ্রবণ হতে পারে।


যেসব এলাকায় বা পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ লোকের আনাগোনা বেশি, সেখানে অপরাধপ্রবণতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। ভ্রাম্যমাণ মানুষের আনাগোনা বেশি থাকলে কোনো অপরাধ করে তা লুকিয়ে ফেলা সহজ হয় এবং অপরাধী খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে সেসব এলাকার সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মানুষের অপরাধমূলক মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। কাজেই, সেখানে বেড়ে ওঠা মানুষের মধ্যে অপরাধমূলক মানসিকতা তুলনামূলকভাবে বেশি তৈরি হতে পারে।


দরিদ্র এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় তরুণ ও যুবকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সহিংস আচরণের জন্ম দেয়। তাছাড়া, সেখানে নিম্নবর্গের মানুষের সংখ্যা বেশি থাকায়, তারা নৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে অধিক মাত্রায় উদাসীন থাকে। নৈতিকতার বিষয়ে এই উদাসীনতা তাদের অধিক মাত্রায় অপরাধপ্রবণ করে তোলে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও