দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের কূটনৈতিক তৎপরতা

কালের কণ্ঠ অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার দত্ত প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৫, ০৯:২৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দিয়েছে বেইজিং। এর অংশ হিসেবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া সফর এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়া সফর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৫ সালে শি চিনপিংয়ের প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে এটি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চীন ১৪৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের শিকার।

ওয়াশিংটনের ক্ষতিকর বাণিজ্য শুল্কের ছায়ায় থাকা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বেইজিং। শি চিনপিংয়ের এই সফরকে তাঁর ব্যক্তিগত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ৯ বছর আগে তিনি কম্বোডিয়া এবং ১২ বছর আগে মালয়েশিয়া সফর করেন।


ট্রাম্পের রেসিপ্রোকাল শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে চীন।

কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সব দেশ ট্রাম্প শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ আলোচনার আহবান জানিয়েছে। ভিয়েতনাম এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর সব শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া বাণিজ্য আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের বাণিজ্যের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।


শি চিনপিংয়ের সফরের মাধ্যমে চীনকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত বন্ধন জোরদার করার ঘোষণা দেন চিনপিং। এখানে উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তার সঙ্গে ভিডিও বৈঠক করেছেন। টোকিও ও সিউলে নিযুক্ত চীনা কূটনীতিকরা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।



এই সফরের মাধ্যমে শি এমন একসময় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছেন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপক শুল্ক আরোপ করে চীনা পণ্যের বাজার সংকুচিত করছে। চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে এবং দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যা গাড়ি, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভিয়েতনামে শি একে ‘একতরফা দমননীতি’ হিসেবে চিহ্নিত করে চীন ও ভিয়েতনামকে এর বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহবান জানান। মালয়েশিয়ায় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে ‘ডিকাপলিং, সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাত এবং শুল্কের অপব্যবহার’ প্রত্যাখ্যানের আহবান জানান।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রধান লক্ষ্য হলো তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা। বেইজিং মনে করে, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস করা গেলে নিজস্ব নিয়ম ও বাণিজ্য শর্তাবলি প্রতিষ্ঠা করা চীনের জন্য সহজ হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চীন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শি চিনপিংয়ের মতো শীর্ষ নেতারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ঘন ঘন সফর করছেন, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি অংশ। চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, বিশেষ করে অবকাঠামো, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিতে। এই বিনিয়োগ এই দেশগুলোর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, একই সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াচ্ছে। চীন আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক ফোরামগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ফোরামগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে চীন আঞ্চলিক নিয়ম-কানুন এবং বাণিজ্য চুক্তিতে তার স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায়। এসব কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চায়, যা তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।


তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা চীনের জন্য একটি জটিল বিষয়। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের মাধ্যমে চীনের অর্থনীতিকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। এই দেশগুলো তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। আসিয়ান দেশগুলোর ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ আলোচনার আহ্বানের মধ্যে এই মনোভাব স্পষ্ট। তারা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশ নিতে আগ্রহী, কিন্তু একই সঙ্গে নিজেদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চায়। এই কারণে চীনকে তার অর্থনৈতিক কৌশল এমনভাবে তৈরি করতে হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং তাদের মধ্যে কোনো প্রকার আধিপত্যের ধারণা তৈরি না করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও