
শিক্ষার্থীদের এখন ক্লাসরুমে ফিরে যেতে হবে
গত বছর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট জুলুমবাজ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের নিকৃষ্টতম শাসনের অবসান ঘটায় বর্তমানে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ৮ আগস্ট।
বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব রাজনৈতিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। এর আগে এমন কিছু সংস্কারকার্য সম্পন্ন করতে হবে, যেন আগামীতে যারা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব লাভ করবেন, তারা আর কখনোই জনগণের প্রত্যাশাকে ভূলুণ্ঠিত করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে না পারেন। কারণ জনগণ বারবার প্রতারিত হতে চায় না।
তারা বাংলাদেশকে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ও মানবকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে কোনো সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য স্বস্তিদায়ক ও অনুকূল পরিবেশ দরকার হয়। অনুকূল পরিবেশ না থাকলে কোনোভাবেই সংস্কার কার্যক্রম গতি লাভ করতে পারবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ইতোমধ্যেই প্রায় ৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের অভাবে সংস্কার কার্যক্রম যেভাবে গতিশীল হওয়া উচিত ছিল, তা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের যেন কোনো আগ্রহ নেই।
সর্বত্রই কম-বেশি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ সুযোগে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের কাছে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি যেসব দাবি রাজনৈতিক সরকারের কাছে উত্থাপন করার কথা, সেগুলোও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে একশ্রেণির শিক্ষার্থীর নানা ইস্যুতে হঠাৎ হঠাৎ আন্দোলনে নেমে পড়া।
স্বাধীনতার আগে থেকেই এ দেশের আন্দোলনের ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের গৌরবময় অংশগ্রহণের ঐতিহ্য রয়েছে। ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলন এবং সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রেখেছে, তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রতিবারই আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গেছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ অবসানের পর ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। এ অবস্থায় ছাত্র-শিক্ষক সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন এবং যথারীতি পুর্ণোদ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি, কিছুদিন আগেও অস্ত্র হাতে শত্রু নিধনে ব্যস্ত ছিল যে ছাত্রটি, সেও ক্লাসে উপস্থিত হয়ে সুবোধ বালকের মতো শিক্ষা গ্রহণ করছে। যে ছাত্রটি অস্ত্র হাতে য্দ্ধু করেছে, সে তার অস্ত্র জমা না দিয়ে সমাজবিরোধী কাজে তা ব্যবহার করতে পারত। অর্থাৎ প্রতিটি আন্দোলন শেষেই ছাত্ররা তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে বিদ্যার্জনে মনোযোগী হয়েছে।
এটি স্বাভাবিক হলেও নিঃসন্দেহে গৌরবময় দৃষ্টান্ত। কিন্তু এবার কিছুটা হলেও এর ব্যত্যয় লক্ষ করা যাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রথাগত রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, সে তা হতে পারে। এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কিছু শিক্ষার্থী নানা ইস্যুতে আন্দোলনের নামে রাজপথে নেমে আসছে। এতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের বিদ্যার্জনের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিক্ষার্থীদের আন্দোলন