
আমেরিকা, চীন, ভারত ও বাংলাদেশের কাছে রাখাইন গুরুত্বপূর্ণ কেন
কক্সবাজার থেকে আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত মানবিক করিডর যখন ‘টক অব দি কান্ট্রি’, তখন যুদ্ধ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য সমগ্র দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। মানবিক করিডর স্থাপন তো দূরের কথা, যখন সেটি নিয়ে কেবল ৪-৫ দিন হলো আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন অনেক দায়িত্বশীল মহল অনেক দায়িত্বহীন উক্তি করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? কেউ কেউ তো এতদূরও বলছেন যে, এর ফলে নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নও হতে পারে। যে ইউনূস বিশ্বে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন, তিনি কি এমন অবিবেচকের মতো কাজ করতে পারেন, যার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে? তাদের সেই প্রশ্নের যোগ্য জবাব মিলেছে গত বুধবার ৩০ এপ্রিল বিমানবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে।
৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বার্ষিক মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছেন, একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে তার শিরোনাম করা হয়েছে নিুরূপ : ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে-প্রধান উপদেষ্টা’। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি না রাখাটা আত্মঘাতী। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুগোপযোগী বিমানবাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আমাদেরই প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। কাজেই এ পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। প্রস্তুতি নিতে হলে আধা-আধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই। এটা এমন এক পরিস্থিতি, জয়ই একমাত্র অপশন। পরাজয় এখানে কোনো অপশন হতে পারে না। কাজেই আমাদের প্রস্তুতি কত উচ্চ পর্যায়ে নিতে পারি, তার চেষ্টা থাকতেই হবে।
উদ্ধৃতিটা বেশ বড় হয়ে গেল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাইন্ডসেট যেন জনগণ ভালোভাবে বুঝতে পারে, সেজন্যই এ লম্বা উদ্ধৃতি দিতে হলো। তার এ বক্তব্য থেকে এটা ধরে নেওয়া যায়, তিনি যদি লম্বা সময় রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী অর্থাৎ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে হিসাবে ধরার মতো বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হতো। যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করেন, তারা কি দেখছেন না যে, বিগত সাড়ে ১৫ বছর পর এই প্রথম ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে বাংলাদেশের সরকার? ভারত হিটলারের গোয়েবলসের ডাহা মিথ্যাচারের মতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যার বেসাতি শুরু করেছে। কিন্তু ইন্টেরিম সরকার গা করছে না। ওরা আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে। কিন্তু সেটি পুনর্বহাল করার জন্য এ সরকার ভারতকে তোষামোদ করছে না। বরং আমাদের বিমানবন্দরগুলোর মাল পরিবহণ সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হয়েছে।
ফিরে আসছি মানবিক করিডর প্রসঙ্গ নিয়ে। এ ব্যাপারে সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কথা বলেছেন। প্রথমে গত ২৮ এপ্রিল সোমবার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আপাতত বলছি না। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, তাহলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আমরা সহযোগিতা করব।
এরপর এ ব্যাপারে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল তিনি বলেন, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ যৌক্তিক পরিকাঠামোগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। তবে রাখাইনে সহায়তা পাঠানো নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- করিডোর
- মানবিক সহায়তা