
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কা: মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে হবে
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও এক ডজনের বেশি মানুষ আহতের ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন গত ২২ এপ্রিলের ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। সংগঠনটি পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলা হচ্ছে।
এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সমর্থন রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হামলার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে শুরু থেকেই। হামলার জবাবে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা কয়েক দশক পুরনো একটি পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে। দুই দেশ একে অপরের বিমানের জন্য আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়েরও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এই উত্তেজনা কি সত্যিই যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে, নাকি এটি দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর আরেকটি কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের পালা? ইতিহাস, সামরিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্নের গভীরে গিয়ে আমরা এই বিশ্লেষণ করব।
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সেই ১৯৪৭ সালেরে ভারত ভাগের সময় থেকেই বৈরী। দেশভাগের পর থেকে কাশ্মীর প্রশ্নে ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯ সালে কারগিলে তিনটি সরাসরি যুদ্ধ হয় দুই দেশের মধ্যে।
কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে সীমান্ত লঙ্ঘন, গেরিলা অনুপ্রবেশ ও পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। যুদ্ধ স্থায়ী হয় প্রায় এক মাস, কোনো পক্ষই স্পষ্ট জয় পায়নি। উভয় দেশই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধটি শেষ হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণমাত্রার একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভারতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে পাকিস্তান বিপর্যস্ত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এটি ছিল পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে বড় পরাজয়।
এই দুই যুদ্ধই দেখায় যে, যুদ্ধ শেষপর্যন্ত দুই দেশেই মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে। এমনকি ১৯৯৯ সালের কারগিল সংঘাতও তা-ই প্রমাণ করে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাত ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করেছিল।
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর অধিকারী। তবে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’ অনুযায়ী, ভারত সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যুদ্ধ ও সংঘাত
- ভারত-পাকিস্তান