
সংস্কার ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নতুন সমস্যা তৈরি করবে
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনপ্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ একজন স্থানীয় শাসনবিশেষজ্ঞ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপকের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদন সম্প্রতি সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু, দেশের স্থানীয় সরকারের সমস্যা ও সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।
আপনার নেতৃত্বাধীন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আপনাদের কাজের পটভূমি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
তোফায়েল আহমেদ: যখন আমাদের কাজটি করতে দেওয়া হয়, তখন কেবল স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছিল। সমস্যাগুলো বিবেচনা করে আমরা কমিশনের সদস্যরা বসে বিস্তারিত কার্যপরিধি ঠিক করেছি। আমরা ২১টি বিষয় নির্ধারণ করি। তার ভিত্তিতে আমরা নিজেরা বিভিন্ন গবেষণাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দলিল দেখেছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে একটি জরিপও করেছি।
এতে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ অংশ নেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, পৌরসভা পর্যায়ে গিয়েও মতবিনিময় করেছি। কমিশনের অফিসেও অনেক মানুষ এসে মতামত দিয়েছেন। ওয়েবসাইট, টেলিফোন ও হোয়াটসঅ্যাপেও মানুষ প্রচুর সাড়া দিয়েছেন। অনেকে লিখিতভাবেও মতামত দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে আমরা কাজটি করেছি।
আপনাদের দৃষ্টিতে স্থানীয় সরকারের বড় সমস্যা কী মনে হয়েছে?
তোফায়েল আহমেদ: এখানে একটি সমস্যা বড় সমস্যা না। একটা সমস্যা ধরবেন, দেখবেন এর সঙ্গে আরও ১০টি সমস্যা জড়িত। সমস্যাগুলো কেন্দ্রীভূত হয়েছে আইন ও কাঠামোতে। তারপর আবার চর্চায় সমস্যা। এসব বিষয়ে আমরা সুপারিশগুলো করেছি। আমাদের প্রতিবেদনটি দুই খণ্ডে করেছি। প্রথম খণ্ডে আছে বিশ্লেষণমূলক বিষয় এবং সুপারিশ। আর দ্বিতীয় খণ্ডে আমরা কতগুলো আইনের খসড়া করে দিয়েছি। কারণ, সুপারিশমালা বাস্তবায়নে কিছু আইন সংশোধন বা নতুন আইনের প্রয়োজন হতে পারে। খসড়া করে দিয়েছি, সেটি দেখে সরকার চূড়ান্ত করবে।
স্থানীয় সরকারের কাঠামোর বিষয়ে বলছিলেন। স্থানীয় সরকারের কাঠামোটি কেমন হবে, সে বিষয়ে যদি বলেন?
তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বললে তারা কি শুধু সনদ দেবে, গম ও চাল বিতরণ করবে, এটাই কি তাদের কাজ? সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সরকার হতে গেলে ওই বিশেষ এলাকায় কিছু কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত সংকীর্ণ চিন্তা থেকে স্থানীয় সরকারকে বুঝে থাকি। এর ঐতিহাসিক কারণ আছে। আমাদের এখানে স্থানীয় সরকারের জন্ম ঔপনিবেশিক শাসনের সময়।
বাংলাদেশ হওয়ার পর সেটি একটু পরিবর্তন হলো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, কিন্তু আচরণটি গণতান্ত্রিক হবে না। আচরণটি হবে ব্যক্তি ক্ষমতাকেন্দ্রিক। এ রকম একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবারও আমলাতন্ত্রের গর্ভে স্থানীয় সরকারকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মানে স্থানীয় সরকার আসলে প্রশাসনিক এককের ভেতরের মধ্যেই থাকবে।
এ রকম পটভূমিতে আপনারা যেসব সুপারিশ করেছেন, সেগুলো স্থানীয় সরকারের খোলনলচে পাল্টে ফেলার মতো।
তোফায়েল আহমেদ: আমরা শুধু রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় সরকারকে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা এবং নিচের স্তর থেকে ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা করা—এ রকম জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিছু সেবা ও অর্থায়ন করে স্থানীয় সরকারকে সরকারের চরিত্র দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এসব সুপারিশ কি বাস্তবায়নযোগ্য বা বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন?
তোফায়েল আহমেদ: হবে, এটা তো আমি বলতে পারব না। কিন্তু এটা হওয়া উচিত। কারণ, আর কত অপেক্ষা করব?
এখন তো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। এ বিষয়ে আপনাদের কি কোনো সুপারিশ আছে, থাকলে সেটি কী?
তোফায়েল আহমেদ: দলীয় প্রতীকে নির্বাচন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ চাইছেন না। এখানে কিন্তু শুধু দলীয় প্রতীক বললে হবে না, আরও কিছু বিষয় আছে। আমি অমুককে চেয়ারম্যান করব, অমুককে চেয়ারম্যান করলে আমি তাঁর কাঁধে ভর রেখে এমপিগিরি করব, নির্বাচন করব।