
হতে চেয়েছিলেন স্থপতি, হয়ে গেলেন ডিজাইনার
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন তাসমিত আফিয়াত। একদিন তাঁকে স্টাইল গুরু নামে এনটিভির একটা রিয়েলিটি শোর বাছাইপর্বে নিয়ে গেলেন মা। লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের চেয়ে বয়সে বড়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেখে ঘাবড়ে গেলেন তাসমিত। বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য মাকে জোরাজুরি করতে লাগলেন। মা বললেন, ‘হেরে গেলে আমি তোমাকে নিয়ে যাব। তবে তোমাকে প্রতিযোগিতা ফেস করে যেতে হবে।’ ২০১১ সালের সেই দিন তাসমিতের মা যদি তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন, এই লেখার সূত্রপাত তাহলে হয়তো হতো না!
বিচারকেরা তাসমিতকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হোয়াট ইজ ফ্যাশন?’ উত্তরে তাসমিত তেমন কিছু না ভেবেই বলেছিলেন, ‘ফ্যাশন ইজ হোয়াট ইউ সি ইন মি।’ বিচারকেরা যেন এই উত্তরেরই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা দাঁড়িয়ে গেলেন, হাততালি দিলেন। এই প্রতিযোগিতায় মাত্র ২ ঘণ্টার ভেতর বিভিন্ন কনসেপ্টে পোশাকের ডিজাইন করে, বানিয়ে তা মডেলকে পরিয়ে র্যাম্পে উপস্থাপন করতে হয়েছিল। পরপর বেশ কয়েক দিন প্রতিযোগীদের ভেতর সেরা হয়েছিলেন সবার ছোট তাসমিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে ভর্তি হলে তা মেনে নিতে পারেননি তাঁর বাবা। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার রাস্তায় না গিয়ে চারুকলায় ভর্তি হওয়ায় কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বাবা। তাসমিতেরও জিদ হলো। বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়াই বন্ধ করে দিলেন। ২০১২ সাল থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা শুরু করল তাসমিতের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘স্ট্রাইড’। করপোরেট চাকরিও করা শুরু করলেন। সেই সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং। সমান্তরালে পড়াশোনাটাও চলছিল।
কীভাবে সম্ভব? উত্তরে তাসমিত বললেন, ‘এত ছুটে বেড়াতাম আর দৌড়াদৌড়ি করতাম যে মাঝেমধ্যে আমাকে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হতো। আমার সহপাঠী বা শিক্ষক অথবা আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। কেউ কেউ হয়তো বলবে আমি রুড (রূঢ়), তবে সে-ও সাক্ষ্য দেবে যে আমি কোনো দিন কারও সঙ্গে দশটা মিনিট আড্ডা দিইনি। আমার কোনো বন্ধু ছিল না। কাজই ছিল আমার বন্ধু। ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে গেছি। ক্লাস থেকে বের হয়ে অফিস। অফিস থেকে বাসা। কোনো রকমে দুটো খেয়ে ঘুম। আমি এত পরিশ্রম করতাম যে এশিয়াটিকে আমার বস ইরেশ যাকের মজা করে বলতেন, “এত টাকা দিয়ে কী করবা?”’
তাসমিত আরও যোগ করলেন, ‘আসলে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল কাজের কোনো বিকল্প নেই। তখনই পড়াশোনাটা পোক্ত হয়। আমার সেটা হয়েছিল। তৃতীয় বর্ষে অ্যানিমেশন শেখানোর আগেই আমি অফিসে অ্যানিমেশনের কাজ করতাম!’
- ট্যাগ:
- লাইফ
- ক্যারিয়ার
- ফ্যাশন ডিজাইনার