
মরা পদ্মায় বিপর্যস্ত প্রাণ-প্রকৃতি
একসময় রাজশাহী অঞ্চলের প্রাণ ছিল পদ্মা নদী। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল মানুষের জীবিকা ও সভ্যতা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাছ ধরেই দিন চলত হাজারো জেলের। দূর থেকে শোনা যেত নদীর গর্জন। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। পদ্মার যৌবন হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর আয়তন এখন অর্ধেকেরও কম, গভীরতাও নেই আগের মতো। যেখানে একসময় ঢেউ খেলত উত্তাল পানি, সেখানে আজ বিস্তীর্ণ বালুচর। প্রমত্তা পদ্মা এখন এক বিবর্ণ মরুভূমি। এর ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কৃষির ভবিষ্যৎ।
পদ্মার এই মরণদশার শুরু ৫০ বছর আগে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে উজানে ১৮ কিলোমিটার ভেতরে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত। সেই বাঁধ পদ্মার পানি ঢুকিয়ে দিয়েছে ভাগীরথী নদীতে। এর ফলে সচল থাকছে কলকাতা বন্দর। ফারাক্কা বাঁধের দক্ষিণের অংশ সব সময় পানিতে ডুবে থাকলেও উত্তরে জেগে থাকে চর।
বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সাত গবেষক সম্প্রতি রাজশাহীতে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এটি স্প্রিঙ্গার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৪ সালে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে পানিপ্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ ঘনমিটার। তবে ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের পর এখন শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে ১ হাজার ৭৬ ঘনমিটারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ৫০ বছরে পদ্মার প্রবাহ কমেছে ২৬০৯ ঘনমিটার, হ্রাস পেয়েছে ৭১ শতাংশ। বর্তমানে পদ্মায় প্রবাহ রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পদ্মায় এভাবে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশ মরুকরণের দিকে চলে যেতে পারে। তাঁরা সতর্ক করেছেন, যদি আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হয় এবং বর্ষাকালে পানি সংরক্ষণে বিকল্প পানির উৎসের উন্নয়ন না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।