বিদেশে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের অন্তরালে

কালের কণ্ঠ এ কে এম আতিকুর রহমান প্রকাশিত: ০১ মে ২০২৫, ০৯:৪৬

এ বছরের ১১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে শাখা গঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে বাংলাদেশে এসব দলের মধ্যে যে বৈরী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়, তা তাদের প্রবাসী শাখাগুলোতেও একইভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তিনি এসব দলীয় কর্মকাণ্ড বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টে যেমন কাজ করে, তেমনি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে ইতিবাচক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সরকারের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে অনেক দুর্বল করে দেয় বলে মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সমন্বিত ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানকে আরো কৌশলগতভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি সুসংহত এবং ইতিবাচক আখ্যান তৈরির ওপর আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিগত বছরগুলোতে বিদেশে অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া বাংলাদেশের নেতাদের ঘিরে ঘটে যাওয়া কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিবেচনায় তিনি ওই কথাগুলো বলেছেন।


এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যখন একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশ সফর করেন, তখন তাদের প্রবাসীরা তাদের নেতাকে লক্ষ করে প্রকাশ্য বিক্ষোভে অংশ নেয় না। আমাদের ক্ষেত্রে এটি বিপরীত এবং এটি অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। আমাদের এই আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’ প্রবাসী ভারতীয়রা স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তিকে কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে ধরে থাকে, তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক ভারতীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।


একইভাবে ভারতীয় কম্পানিগুলো, বিশেষ করে সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিতে, জাতীয় ব্র্যান্ডিংয়ের শক্তিশালী উদাহরণ হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ এই সম্ভাবনাকে একই পরিমাণে কাজে লাগাতে পারেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।



উপদেষ্টা মহোদয় তাঁর সুদীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যে এই কথাগুলো বলেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই, বিশেষ করে যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা থাকার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে বিভাজন বিরাজমান তার ফসলই হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড।


দেশের সম্মানের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে বিদেশে নিজেদের মধ্যে অযথা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কলহ বা দ্বন্দ্ব মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ঐক্য এবং মনোবলকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে রাজনীতির বিরূপ প্রভাব তাঁদের সহমর্মিতার দুয়ারকে সংকুচিতই করে না, অনেক সময়ই পরস্পরের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এমনকি বিদেশের মাটিতেও তাঁদের মধ্যে অহরহ মারামারি, ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা ঘটছে। এসবের দায় কি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ এড়াতে পারবেন? অথচ উল্টোটা ঘটলে, ভারতের মতো বাংলাদেশের সম্মান যেমন বাড়ত, তেমনি আমাদের প্রবাসীরাও আমাদের জন্য গর্ব বয়ে আনতেন।


তথ্য মতে, এক কোটির বেশি বাংলাদেশের নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, কেউ বা অস্থায়ীভাবে কর্মরত।


তাঁদের মধ্যে, বিশেষ করে স্থায়ীভাবে যাঁরা সেখানে রয়েছেন, বেশির ভাগকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের; যেমন—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি দলের শাখা গঠনের মাধ্যমে ওই সব দেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওই সব দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ওই বিদেশি শাখাগুলোর অনুমোদন দিয়ে থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিক্রমেই তাদের ওই সব শাখা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের রাজনীতির চর্চা করার সুযোগ পেয়ে থাকে। বিষয়টি সেসব দেশের আইনগত দিক থেকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অন্য একটি দেশে তাঁদের দলের কর্মকাণ্ড চালানো কতটা নৈতিকতার মাপকাঠিতে বিবেচ্য সে প্রশ্ন থেকেই যায়। যা হোক, অস্থায়ীভাবে কর্মরত বাংলাদেশিরা যেহেতু কয়েক বছরের মধ্যেই কর্মশেষে দেশে ফিরে আসেন, তাই তাঁরা বাংলাদেশের ওই সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়াতে খুব একটা আগ্রহ দেখান না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও