বোরোর ভালো উৎপাদন মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সহায়ক হবে

বণিক বার্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। এ দেশে ধান উৎপাদন হয় তিনটি মৌসুমে। এগুলো হলো আউশ, আমন ও বোরো। উৎপাদনের পরিমাণ বিচারে বোরো শীর্ষে। তারপর রয়েছে যথাক্রমে আমন ও আউশ। একসময় আমন ও আউশ ছিল ধানের প্রধান মৌসুম। বোরোর মৌসুম ছিল কম গুরুত্বপূর্ণ। হাওর, বিল ও অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে এর আবাদ ছিল সীমিত। কিন্তু আধুনিক সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে বোরোর আবাদ ক্রমাগতভাবে বেড়ে যায়। হ্রাস পায় ঝুঁকিপূর্ণ আউশ ও আমনের আবাদ। বোরো ধানের মৌসুম অনেকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ। এ ধান সেচনির্ভর, আধুনিক উপকরণের প্রতি সংবেদনশীল এবং এর ইউনিটপ্রতি ফলন বেশি। কৃষকের লাভও বেশি। ফলে বোরো ধান চাষে এখন কৃষকদের অগ্রাধিকার। উঁচু, নিচু ও সমতল সব রকম জমিতেই চাষ হয় বোরো ধান। মোট ধানের প্রায় ৫৪ শতাংশই উৎপাদিত হয় বোরো মৌসুমে। আমন ও আউশের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৯ ও ৭ শতাংশ। অতএব দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও বাজারে খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীলতার জন্য বোরো ধানের ভালো উৎপাদন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে।


এবার বোরোর আবাদ হয়েছে ৫০ দশমিক ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ২৬ লাখ টন। বছরের শুরুতে খরা ও পরে বন্যার কারণে এবার আউশ ও আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই কৃষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল বোরোর উৎপাদন বৃদ্ধির। তবে উপকরণের উচ্চমূল্য, পানি সেচের বিভ্রাট, সাম্প্রতিক খরা ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে তাদের প্রচেষ্টায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবু সারা দেশে মাঠের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বোরোর ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। গত বছর বোরোর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১০ লাখ টন চাল। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ কোটি ৭ লাখ টন। এবার বোরোর উৎপাদন হতে পারে ২ কোটি ১২ লাখ টন চাল। এরই মধ্যে হাওর, বিল ও অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে আবাদকৃত আগাম জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সামনের মে মাসের মধ্যভাগ নাগাদ সমতলের ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে যাবে। আগাম বন্যা, ঝড় ও শিলাবৃষ্টি থেকে মাঠের ধান নিরাপদ থাকলে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তাতে আগামী আমন ধানের মৌসুম আসা পর্যন্ত খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। চালের মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা থেমে যাবে। এতে কমবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি।



বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এর পেছনে রয়েছে এবারের খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিজনিত উৎপাদন হ্রাস। বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি। গত নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশে। গত মার্চে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে। শীতকালীন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, শাকসবজির মূল্যহ্রাস এবং আলু-পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দরপতন এর প্রধান কারণ। সামনে বোরো ধানের চাল বাজারে এলে এর দাম কমবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো শিথিল হয়ে আসবে। তবে এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তদারকি জোরদার করতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেটের কারসাজি থামাতে হবে। বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ আরো দৃশ্যমান ও কার্যকর করতে হবে।


বোরো উৎপাদন মৌসুমে একসঙ্গে অনেক বেশি ধান আসে কৃষকের ঘরে। তাতে বিক্রিয়যোগ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে যায়। কিন্তু এ সময় পর্যাপ্ত ক্রেতার অভাবে কখনো কখনো ধানের দাম কমে যায়। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান তখন কৃষকদের সুরক্ষা দিতে পারে। আমন ও বোরো উৎপাদন মৌসুমে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয় করে। এর তুষ ছাড়িয়ে তা চালে রূপান্তরের পর গুদামে মজুদ করে রাখে। অন্যদিকে চাতালের মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে সরকার চাল ক্রয় করে গুদামে মজুদ করে। অনুৎপাদন সময়ে যখন ধান-চালের দাম বেড়ে যায়, তখন ভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য সরকার অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে। পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন সহায়ক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তা নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার দীর্ঘকাল ধরে এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করে আসছে। এবার কৃষক পর্যায়ে ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। চালের দাম ৪৯ টাকা। ধান সংগ্রহ করা হবে সাড়ে তিন লাখ টন। চাল ১৪ লাখ টন। মোট সংগ্রহ হবে সাড়ে ১৭ লাখ টন ধান ও চাল। চাল হিসেবে প্রায় ১৬ লাখ টন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও