কাশ্মীরে হামলা: ভারত কী করবে

www.ajkerpatrika.com কাশ্মীর এম আর রহমান প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০

কোনো মানুষ নিজের চোখে স্বর্গ দেখেছেন—এমন দাবি কেউ কখনো করেনি। পুরোটাই কল্পনায়। কিন্তু স্বর্গ যে অতীব মনোরম, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই হয়তো হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। কাশ্মীরে যাঁরা গেছেন, তাঁরা এর সৌন্দর্যে মোহিত হননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কাশ্মীরের মধ্যে আবার পেহেলগামের কদর আলাদা। অনেকে একে আদর করে বলেন প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।


সেই প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ডে কিনা ২২ এপ্রিল জঙ্গিরা হত্যা করল ২৬-২৭ জন মানুষকে। তা-ও ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং নিশ্চিত হয়ে। একজন বাদে এরা সবাই হিন্দুধর্মাবলম্বী। এদের মধ্যে একজনের বাড়ি আবার নেপালে। তাহলে এই ঘাতকদের রাগটা কার ওপর? ভারতীয় হিন্দুদের ওপর, না শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর? কিন্তু এদেরই বাঁচাতে তো জঙ্গিদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন ঘোড়াচালক শহীদ সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। এদের মধ্যে কেউ হয়তো তাঁর ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বৈসরন নামে এই এলাকায় এসেছিলেন। আদিলকেও ছাড়েনি জঙ্গিরা। তাঁর ‘হটকারিতা’ ক্ষমার অযোগ্য মনে করে সেখানেই শেষ করে দিয়েছে।

২৯ বছর বয়সী আদিল। বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী ও পাঁচ ভাইবোন রয়েছেন। পর্যটকদের ভরসায় চলে জীবন। আর পর্যটকেরা—কেউ হামলার ছয় দিন আগে বিয়ে করে ভূস্বর্গে গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমা যাপনে। সমাজ-রাষ্ট্র-মানুষ কী জবাব দেবে ওই অকাল বৈধব্যের শিকার মেয়েটিকে? সরকারি সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির মারপ্যাঁচ, কোন পাল্লায় কে বেশি ওজনদার—তা কি বোঝে মেয়েটি? আর বুঝলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামান্যতম অংশগ্রহণ আছে? নেই। নিহত-আহত, তাঁদের পাশে থাকা স্বজন কারোরই নেই। এ এক অদ্ভুত সার্কাস। মাস্টারের অঙ্গুলি হেলনে আমরা সবাই নাচতে থাকব, কিন্তু অদৃশ্য মাস্টার কখনো শনাক্ত হবে না।




জঙ্গিদের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে অনেকেই দেড়-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। এই সময়ে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ হেলিকপ্টার ছাড়া সম্ভব ছিল না। এরই মধ্যে স্থানীয় মুসলমান ঘোড়াচালকেরা কাঁধে-পিঠে করে তাঁদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছেন। এই সময়কালে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। সরকারি উদ্ধার তৎপরতা আরও দ্রুত করলে হয়তো কেউ কেউ বেঁচে যেতে পারতেন—এমনটাই দাবি তাঁদের স্বজনদের। তাঁদের হারানোর বেদনার মধ্যে যুক্তির অকাট্যতা খুঁজতে যাওয়া বোকামি। কিন্তু তা ফেলে দেওয়ারও নয়।


২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ের ওপর জঙ্গি হামলা এবং ৪৫ জন জওয়ানের মৃত্যুর পর কাশ্মীরে এত বড় ঘটনা ঘটল। বৈসরনের ঘটনা প্রমাণ করল, কাশ্মীর নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৯ সাল থেকে যে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার মধ্যে বজ্র আঁটুনির গেরোটা ফসকাই থেকে গেছে। একটা অদ্ভুত বিষয় হলো, ২২ এপ্রিল যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন। ফলে এই জঘন্য ঘটনার শোক ও ক্ষোভ দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত হয়েছে। ভারতের সব জায়গার মানুষ এই ঘটনায় প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের দাবিতে এক কাতারে।


এই ঘটনা নিয়ে ভারতের শাসক দলের একাংশ হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার কার্ড খেলার চেষ্টা করেছিলেন। তার সঙ্গে ছিল মোদি-প্রিয় গোদি মিডিয়া। তবে তাদের সেই চেষ্টা খুব একটা কলকে পায়নি। কারণ আদিলের আত্মত্যাগ, স্থানীয় ঘোড়াচালকদের উদ্ধার তৎপরতা, সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ঝন্টু শেখ নামে এক বাঙালি মুসলমান সৈনিকের শহীদ হওয়া—এই ঘটনায় সমালোচনামুখর না হয়ে সব রাজনৈতিক দল মোদি সরকারের পাশে এসে দাঁড়ায়, সর্বোপরি কাশ্মীরজুড়ে হয়েছে বৈসরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ। কাশ্মীরের প্রতিবাদ ছিল অভূতপূর্ব। যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত চোখ রাখেন তাঁরা জানেন, পেহেলগামের এক প্রত্যন্ত বাজারে কীভাবে স্থানীয় মানুষ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন। সেখান থেকে একজন তা সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁদের অবস্থান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও