জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না

প্রথম আলো ড. বুলবুল সিদ্দিকী প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:০৬

এই অঞ্চলের তথা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের নিপীড়নের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আমরা ইতিহাসের নানা বাঁকবদলের সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাধ্যমে শাসিত ও শোষিত হয়েছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলকে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় এই কারণে যে প্রায় দুই শ বছরের গোলামির মাধ্যমে আমাদের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়। দুর্নীতি ও জাতীয় বিভাজনের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা মূলত তখন থেকেই আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। এর সঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমলাতন্ত্র।


এ প্রসঙ্গে মাওলানা ভাসানী তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনি মাও সে তুং-এর দেশে বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমাদের আমলাতন্ত্র তাদের সাম্রাজ্যবাদী দীক্ষাগুরুদের নিকট থেকে প্রাপ্ত মনোভাব আজও ত্যাগ করতে পারেনি। ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে প্রগতির স্থান নিয়েছে প্রতিক্রিয়া, উন্নয়নের বদলে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যর্থতা’।


মাওলানা ভাসানী আমলাতন্ত্র ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে লিখেছিলেন সেই ১৯৬৮ সালে। অথচ ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, স্বাধীনতার এত বছর পার হওয়ার পরও আমরা এই সব সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। উপরন্তু বিগত সরকারের শাসনামলে আমরা দুর্নীতি এবং স্বদেশের উন্নয়ন পরিপন্থী সব ক্ষেত্রেই অগ্রগামী ছিলাম। এসব কারণে দেশের প্রতিটি খাতে আমরা একধরনের হতাশা এবং অনুন্নত ও অদক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা দেখতে পাই।


দীর্ঘ সময় ধরে এই চর্চার ফলাফল হলো, জাতি হিসেবে আমাদের বিভাজিত থাকা, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থেও বিগত সময়গুলোয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে বাধা হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় ঐকমত্য সেই হিসেবে কঠিন একটা বিষয় হলেও সেটি দেশের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব যে আমাদের জাতীয় জীবনে আমরা খুব কম ক্ষেত্রেই জাতি হিসেবে কোনো বিষয়ে একমত হতে পেরেছি বা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। সেটি আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরসহ সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।



এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করেছে। যেহেতু ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলোই আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার, সেহেতু তাদের মাথায় রেখেই এই কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এখানে সুশীল সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বিধায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষদেরও বিবিধ সংলাপে যুক্ত করতে পারে।


এতে করে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে স্বচ্ছ আলাপ–আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কমিশন একটি গণসংলাপেরও আয়োজন করতে পারে, যাতে জাতীয় ক্ষেত্রে ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণ ওয়াকিবহাল থাকে এবং অংশগ্রহণ করতে পারে।


এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, জাতীয় স্বার্থে সত্যিকার অর্থেই কি একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব? যদিও বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য খুব একটা ইতিবাচক আশার সঞ্চার করে না, তবু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী পটভূমি বিবেচনায় বর্তমান সময়টা ভিন্ন এবং এখনই সময় জাতীয় স্বার্থে আমাদের একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো।


তবে এটাও ঠিক, আমরা যে রাতারাতি অনেক বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব, সেটা প্রত্যাশা করাও বোধ করি কঠিন। তাই এই প্রক্রিয়ায় কোন কোন বিষয় আমরা অর্জন করতে চাই, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তববাদী ও প্রায়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি হাতে নিতে হবে।


রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংলাপের মাধ্যমে আমরা যদি রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে গিয়ে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে আসতে পারি, সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর অর্জন। জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বেশ কয়েকটি খাতের কথা আমরা বলতে পারি, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই কমিশন কাজ করে চলছে। এখানে যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, রাষ্ট্রপ্রধানের একক ক্ষমতার বিষয়টি এমনভাবে সমন্বয় করা, যাতে করে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী চরিত্র ভবিষ্যতে আর তৈরি হতে না পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও