
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বনাম আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্ত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার দেশটির উচ্চশিক্ষার ওপর যে পরিকল্পিতভাবে খড়্গহস্ত হয়েছে, তার কারণ দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোয় ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সেই তোপ দাগতে গিয়ে বেশ প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখীন হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে চাপান-উতোর লেগে গেছে হার্ভার্ডের।
গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’র জল বহুদূর গড়িয়ে যাওয়ার পর অবশেষে হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক অ্যালান এম গার্বার ১৪ এপ্রিল যে প্রকাশ্য চিঠির মাধ্যমে সরকারি কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, তা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে এক ঐতিহাসিক দলিল।
অবশ্য গার্বারের চিঠির আগেই অনেকেই বলেছিলেন, হার্ভার্ড যদি বুদ্ধিবৃত্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে, তাহলে সরকার খড়্গহস্ত হওয়ার পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। হার্ভার্ডের সিংহভাগ শিক্ষক, বহু শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গার্বারের পক্ষে কথা বলেছেন। নামটি হার্ভার্ড বলেই সরকারও কিছুটা চাপে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় সরকারের হস্তক্ষেপ
চাপান-উতোর চরমে পৌঁছায় মূলত ফেডারেল সরকারের সাধারণ সেবা প্রশাসন (জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস) এবং শিক্ষা বিভাগের (ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন) যৌথ টাস্কফোর্সের কর্তৃত্ববাদী এক চিঠির পর।
১১ এপ্রিলের এ চিঠিতে টাস্কফোর্স হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে ১০টি দাবি আমলে নিতে বলে। এগুলোর মধ্যে আছে: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও নেতৃত্বের ব্যবস্থায় সংস্কার, মাস্ক নিষিদ্ধকরণ, শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গীয় বিবেচনা বন্ধ করে সরাসরি মেধার প্রাধান্য, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া সংস্কার, যেসব বিষয় ও পাঠ্য অ্যান্টিসেমিটিজমের বিরুদ্ধে, সেগুলো রদ করা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে এ সংস্কারগুলো ২০২৫ সালের আগস্টের মধ্যে শুরু করতে হবে এবং অন্তত ২০২৮ সাল পর্যন্ত চলমান রাখতে হবে।
এ ছাড়া সবচেয়ে কঠোরভাবে বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ডাইভার্সিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন’ (ডিইআই) ভিত্তিক সব প্রোগ্রাম বা বিভাগ বন্ধ করতে হবে। আর শেষ দাবি হিসেবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই উচ্চশিক্ষা অধ্যাদেশের ১১৭ ধারা মেনে সব অর্থনৈতিক উৎস ও বৈদেশিক অর্থায়নের তথ্য ফেডারেল সরকারকে জানাতে হবে এবং এ–সংক্রান্ত তদন্তে সরকারকে সহায়তা করতে হবে। অভিবাসনসংক্রান্ত সব বিষয় দেশীয় নিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত করার পাশাপাশি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমের (সেভিস)সব শর্ত পূরণ করতে হবে।
১৪ এপ্রিল হার্ভার্ড তার অবস্থান জানানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি ও অনুদানের মধ্য থেকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। শুধু তা–ই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির করছাড়ের সুবিধা বাতিল করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে না দেওয়ার ব্যাপারেও হুমকি দেয়।
স্বভাবতই টাস্কফোর্সের এমন বক্তব্যকে বিশ্বজুড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানসাধনা ও চিন্তার স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমালোচনাও হচ্ছে। গার্বারও সম্ভবত ভাবতে পারেননি, এই কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধে জনভাষ্য দিয়ে এত বিশাল সমর্থন তিনি অর্জন করবেন। সর্বশেষ খবর হলো, ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফেডারেল আদালতে তহবিল স্থগিতের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। চলমান সরকারি কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে হার্ভার্ডই সরকারি নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান ও মামলা করার নজির স্থাপন করেছে।