নেদারল্যান্ডসের ভাসমান গরুর খামার

www.ajkerpatrika.com নেদারল্যান্ডস শাইখ সিরাজ প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯

নেদারল্যান্ডসের নাগরিক পিটার ভ্যান উইঙ্গারডেন ও মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেন। তাঁরা ২০১২ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে বিজনেস ট্রিপে গিয়েছিলেন। সেখানে হারিকেন স্যান্ডির মুখোমুখি হন। হারিকেন স্যান্ডি ম্যানহাটানকে প্লাবিত করে। সেখানকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। ঝড়ের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহরের খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার খাদ্য সরবরাহকারী ট্রাক তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের অনাহারে কাটাতে হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এসব দেখে পিটার ভাবলেন শহরের মাঝেই যদি খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা থাকত, তবে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না।


নেদারল্যান্ডসে ফিরে পিটার ও মিনকে ভাবলেন জলবায়ুর পরিবর্তন হেতু এমন দুর্যোগ অহরহ ঘটতে থাকবে। এর জন্য প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। সেই ভাবনা থেকে নেদারল্যান্ডসের রটার্ডাম সমুদ্রবন্দরে গড়ে তুললেন ভাসমান এক খামার। বছর তিন আগে পিটার ও মিনকে দম্পতির সেই ভাসমান খামার দেখে আসার সুযোগ হয়। রটার্ডাম সমুদ্রবন্দরে ক্যানেলের এক পাশে পানিতে ভাসছে তিনতলা এক গরুর খামার।

ভাসমান খামারটির পরিকল্পনা করেছেন পিটার ভ্যান উইঙ্গারডেন। তবে খামারটি পরিচালনা করেছেন তাঁর সঙ্গী মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেন। শহর থেকে দূরে থাকায় পিটারের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়নি। কথা হয়েছে মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেনের সঙ্গে। ভীষণ আন্তরিক মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেন তাঁদের কার্যক্রম বিষয়ে আমাদের সবিস্তারে ব্যাখ্যা করলেন। তিনি প্রজেক্টরে তাঁদের প্রজেক্ট সম্পর্কে একটা প্রেজেন্টেশন দিলেন। বললেন, ‘দেখুন, আমরা একটা বিচিত্র সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। সবকিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে। ঠিক আগের মতো থাকছে না কিছু। না আবহাওয়া, জলবায়ু কিংবা শহর। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে আমরা টিকতে পারব না। গবেষণা বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে জনসংখ্যা ৯.৮ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০ জনেরই বসবাস হবে শহরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শহরগুলোকেও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে হবে।’



ভাসমান খামারটির দিকে যেতে যেতে কথা হচ্ছিল মিনকের সঙ্গে। ভাসমান খামারটি নদীর পানিতে ভাসছে। তীরে খামারের অফিস আর বিক্রয় কেন্দ্র। বিশাল এলাকাজুড়ে গবাদিপশুর বিচরণক্ষেত্র। পরিবর্তিত জলবায়ুর ভবিষ্যতের কৃষি নিয়ে বলছিলেন মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্যই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সত্যিকার অর্থেই আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী হবে? জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। বিবর্তনের সময়টাতে অভিযোজন করতে না পারলে হয়তো হারিয়ে যেতে হবে। তাই আগামীর কথা চিন্তাভাবনা করে এখনই প্রস্তুত হতে হবে। শহরকে খাদ্য উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে দূরে রাখলে চলবে না। ফার্মিংয়ের এই ট্রানজেশনকে একসঙ্গে আমরা বলতে চাইছি ট্রান্সফারমেশন।’


২০১৯ সালের ১৩ মে ৩২টি গরু নিয়ে বিশ্বের প্রথম ভাসমান ফার্মটির যাত্রা শুরু। এটি মূলত ডেইরি ফার্ম। গাভি আছে ৪০টির মতো। মিনকের কাছে প্রশ্ন ছিল—কেন তাঁরা ভাসমান ফার্মের কথা ভাবলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন, কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। শহর বাড়ছে। আজ যেখানে বিশাল ভবন তৈরি হচ্ছে, সেটা হয়তো ছিল কৃষিজমি। এটা সত্য যে মানুষের বসবাসের জায়গার কথা ভাবতে হবে, পাশাপাশি ভাবতে হবে সতেজ নিরাপদ খাদ্যের কথাও। কৃষিজমির বিকল্প ব্যবহার এবং নগরের মানুষকে সতেজ খাদ্য সরবরাহের কথা চিন্তা করেই আমাদের এই উদ্যোগ। আরও একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট করতে চেয়েছি, সেটা হলো নগরের মানুষকে সচেতন করা, তোমরা দেখ কোথা থেকে তোমাদের খাদ্য আসে। আবার যেসব দেশ পানিবেষ্টিত, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের মতো দেশ, তারা তাদের খাদ্যের ৯০ ভাগই আমদানি করে। তারা চাইলেও ভাসমান খামার গড়ে সতেজ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।’


বুঝতে পারলাম তাঁদের মূল লক্ষ্যটা কী। ভবিষ্যৎ কৃষি-বাণিজ্যের একটা খাত তাঁরা উদ্ভাবন করে নিয়েছেন। ভাসমান খামারটির অবকাঠামো মূলত স্টিলের তৈরি। ওপরের অংশটি অবশ্য সাদা প্লাস্টিক কাগজে ছাওয়া। ভাসমান বলে পানি বাড়লে পানির সঙ্গে খামারটি ওপরে আসে, আবার পানি কমলে নিচে নেমে যায়। ফ্লোটিং ফার্মের তিনটি অংশ। প্রথম অংশে অর্থাৎ নিচে রয়েছে রিসার্চ সেন্টার। মাঝখানে প্রসেসিং ফ্লোর আর একদম ওপরে রয়েছে গরু। মিনকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই ভাসমান খামারের যে নির্মাণকাঠামো, আপনার কি মনে হয় না এটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও