দাউদ হায়দারের দুঃখপূর্ণ জীবন ভেলা

জাগো নিউজ ২৪ দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২১:০৬

দ্রোহের কবি (দেশের প্রথম নির্বাসিত কবি) দাউদ হায়দারের প্রয়াণ ঘটল প্রবাসে। শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা। হায় স্বদেশ, তুমি তোমার ভূমি-সন্তানদের নির্বাসনে রাখো কোন অপরাধে! প্রচণ্ড অভিমানী প্রবল স্বদেশপ্রেমী দাউদ ভাই শুধু একটি কবিতা লেখার অপরাধে আর নিজের দেশে ফিরতে পারলেন না, প্রবাসেই জীবন কাটিয়ে ঘটল তাঁর জীবনাবসান। মানুষকে স্বদেশহীন রাখার মানবতা বিবর্জিত এমন কাণ্ড কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হতে পারে? জানি না। তবে তা নিশ্চয় নৈতিকতাহীনতার দুঃসহ স্মারক। 'জন্মই আমার আজন্ম পাপ' তাঁর এই কাব্যপঙক্তি কি এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে?


দাউদ হায়দার এক রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান। তাঁর সব ভাইই খ্যাতিমান। জ্যেষ্ঠ ভাই জিয়া হায়দার নাটকের মানুষ এবং শিক্ষাবিদ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালে তাঁর সানিধ্যে বেশ কিছুদিন ছিলাম। তাঁর এর পরের ক্রমানুসারে ভাইদের মধ্যে রশীদ হায়দার কথাসাহিত্যিক, গবেষক। বাংলা একাডেমিতে কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অসাধারণসব বই প্রকাশ করেছেন। মাকিদ হায়দার কবি। তাঁরা সবাই প্রয়াত। আজ এ তালিকাভুক্ত হলেন দাউদ হায়দারও। আছেন কবি জাহিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার। আরিফ হায়দারও নাটকের মানুষ। ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকের ওপর পড়াশুনা করেছেন। ঢাকায় শংকর সাওজালের কারক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক। বলা যায় তাঁর পরিবারটা যেন আলোর মিছিল। শুধুই আলোর ছড়াছড়ি।


অগ্রসর ভাবনার কবি দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন সত্তর দশকের শুরুর দিকে। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোস্যাইটি ফর পোয়েট্রি দাউদ হায়দারের কোন এক কবিতাকে 'দ্যা বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া' সম্মানে ভূষিত করেছিল। সংবাদের সাহিত্য পাতায় 'কালো সূর্যের কালো জ্যোৎসায় কালো বন্যায়' নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। তখন উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিবাদ শুরু করে এবং ঢাকার কোনো এক কলেজের শিক্ষক আদালতে ওই ঘটনায় দাউদ হায়দারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ’৭৪-এর ২২ মে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ নির্দেশে কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে তাকে তুলে দেয়া হয়। তখন এও বলা হয়েছিল কবির নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন ছিল মুজিব সরকার।



’৭৬-এ দাউদ হায়দার তাঁর পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে জমা দিলে তা আটক করা হয়। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি আটক পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। তাঁর পাসপোর্ট ফেরতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এরশাদ সরকারও। পাসপোর্ট ছাড়া অন্য আরেকটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসে সমস্যা দেখা দেয়। ভারত সরকারও দায়িত্ব নিতে চায়নি তখন এই নির্বাসিত কবির। তিনি অন্য কোনো দেশেও যেতে পারেননি পাসপোর্টের অভাবে। এমন এক দুঃখকালে তার পাশে এসে দাঁড়ান কবি-বন্ধু নোবেল বিজয়ী জার্মান বহুমাত্রিক লেখক গুন্টার গ্রাস।


তিনি জার্মান সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত কবিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ’৮৫-এর কোনো এক ভোরে জার্মানির বার্লিনে গিয়ে পৌঁছান দাউদ হায়দার। জাতিসংঘের বিশেষ ‘ট্রাভেল ডকুমেন্টস’ নিয়ে তিনি জীবন কাটিয়েছেন দেশান্তরে। কোনো পাসপোর্ট ছিল না তাঁর একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও । জার্মানি যাওয়ার পর থেকে তিনি সেখানের ‘ডয়েচে ভেলে’ রেডিও চ্যানেলের প্রভাবশালী সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলাদেশের কোনো সরকারের দিক থেকেই তাঁর প্রতি সুবিচার করা হয়নি। টেলিফোনে কয়েকবার তাঁর সাথে কথা বলে জেনেছি অনেক অজানা কথা।


দাউদ হায়দার একজন বাংলাদেশি কবি, লেখক ও সাংবাদিক হিসাবে তাঁর খ্যাতির সীমানা ছিল ব্যাপ্ত-ব্যাপক কিংবা ছড়ানো-ছিটানো । তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনের পর জার্মানির বার্লিনে অনেক প্রতিকূল জীবনযাপন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি একজন আধুনিক কবি। তাঁকে সত্তর দশকের অন্যতম বিপ্লবী কবিও বলা হয়। তাঁর একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ।’ একই নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে। তাঁর কবিতাগুলো যেন সময়ের অগ্নিটিকা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও