অভ্যুত্থানের ভাবনা নিয়ে যত কাজ, যত মত

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৪

২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই ঘটনাপঞ্জিভিত্তিক। আকারে এই বইগুলো খুব ছোট নয়। ঘটনাপঞ্জির আড়ালের ঘটনাও কয়েকটি গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সরকারি উদ্যোগে আন্দোলনের বাছাই করা গ্রাফিতি নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এ অ্যালবাম খুললে বোঝা যায়, বিচিত্র ধরনের চিন্তাধারা ও জাগতিক দর্শন কত ব্যাপকভাবে আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের হৃদয় ও মস্তিষ্কে ঠাঁই করে নিয়েছিল।


’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে শুধু অংশগ্রহণ করিনি, এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আন্দোলন অব্যাহত ছিল দীর্ঘ তিন মাস ধরে। ওই আন্দোলনের ফলে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। কিন্তু তার জায়গায় জেঁকে বসে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন। এ আন্দোলনটি হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের এক মহা ক্রান্তিলগ্নে। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছন্দময় দশদিক কাঁপানো অনেক স্লোগান উঠেছিল। আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে স্লোগান নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়াস ছিল না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার দাবি উচ্চারিত হয়েছিল। এ দাবিই বাস্তব মুক্তিযুদ্ধের রূপ নেয় ১৯৭১-এ।


৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিতি আঁকতে দেখিনি। তবে আলকাতরা দিয়ে কোনো কোনো ভবনের ও স্থাপনায় দৃশ্যমান গাত্রে ‘চিকা’ মারতে দেখেছি। ‘চিকা’ কথাটি একটি প্রাণীর নাম হলেও ঘটনা পরম্পরায় দেওয়ালের প্রতিবাদলিপি পরিচিতি পেয়েছিল ‘চিকা’ নামে। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সংস্কৃতিগত পার্থক্য এঁকে দিয়েছে ঢাকা নগরীর দেওয়ালে দেওয়ালে শতসহস্র গ্রাফিতি। রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রাফিতিগুলোকে সংকলন করে যে অ্যালবাম প্রকাশিত হয়, সেই অ্যালবাম বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের হাতে তুলে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আন্দোলনের চিন্তাসূত্র বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন।



২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণধর্মী। পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ‘জুলাই মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’, আলতাফ পারভেজের ‘লাল জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পথ পরিক্রমা,’ ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামানের ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-নতুন পথে বাংলাদেশ’, সাজ্জাদ শরীফ সম্পাদিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বাক্ষর’, আসিফ নজরুলের ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’, এবং আলী রিয়াজের ‘আমিই রাষ্ট্র’। এছাড়া আরও অনেকে বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং পর্যালোচনা লিখেছেন। টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারেও আমিসহ আরও কয়েকজন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ব্যবচ্ছেদ ও বিশ্লেষণ করেছেন। এদের মধ্যে ইতিহাসবিদ ও বামপন্থি রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।


১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মতো এতগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। বাংলায় ২-৩ জন লিখেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহর ‘অভ্যুত্থানের উনসত্তর’ তথ্য, তথ্যচিত্র, আন্দোলনের প্রচারপত্র এবং আন্দোলনের অন্তর্নিহিত বিপরীতমুখী স্রোতধারার বর্ণনায় উজ্জ্বল। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ব্রিটেন প্রবাসী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বামপন্থি সক্রিয়তাবাদী তারিক আলী ‘Pakistan: Military Rule or People's Power’ নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ লিখেছিলেন। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকে তারিক আলী এ গ্রন্থটি রচনার উদ্দেশ্যে আমারসহ অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। গবেষণাধর্মী এ গ্রন্থটি পাকিস্তানের উভয় অংশে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রামাণ্য দলিল। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ প্রকাশনা সংস্থা জোনাথন কেইপ। সমকালীন বিশ্বরাজনীতি নিয়ে তারিক আলী একগুচ্ছ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার কলমের জোর অসাধারণ। এই অক্সফোর্ডপড়ুয়া কর্মবীরের ইংরেজি ভাষার ওপর দখলও অসামান্য। তারিক আলীর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম ‘Can Pakistan Survive?’ এই গন্থের শিরোনাম থেকে বুঝতে হবে তারিক আলী হলেন একজন দূরদর্শী রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তবে একথা মানতে হবে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখালেখি যত ব্যাপক হওয়া উচিত ছিল, তত ব্যাপক হয়নি। এদিক থেকে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান অনন্য।


১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে লেখালেখি কম হলেও ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় এবং মোহাম্মদ সুলতান কর্তৃক প্রকাশিত ২১-এর সংকলন আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে একটি অনন্য অবদান। এই সংকলন গ্রন্থটি মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের আবেগের একটি এপিটম হয়ে থাকবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও