
শান্তি অসম্ভব, যত দিন অস্ত্রের ঝনঝনানি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে
ভাই ও বোনেরা, বিশেষত যাঁরা ব্যথায় আর দুঃখে যাপন করছেন, তাঁদের নিঃশব্দ ক্রন্দন ঈশ্বরের কানে পৌঁছে গেছে, তাঁদের প্রতিটি অশ্রুর বিচার নেবেন তিনি। ঈশ্বরের তাদের একটিকেও ভুলে যাবেন না! যিশুর সেই দীর্ঘ পথ, রক্তমাখা, কণ্টকিত সেই মৃত্যু, সেই পথ ধরে ঈশ্বর তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন সব মন্দের ভার, আর নিজের দয়ার ভেতর দিয়ে তাকে পরাস্ত করেছেন। হেরে গেছে সেই অহংকার, যা মানুষের হৃদয়কে বিষাক্ত করে তোলে, যা ডানে–বাঁয়ে ছড়িয়ে দেয় বৈরিতা আর পঙ্কিলতা। সেই অহংকার হেরে গেছে, খোদার মেষশাবক (যিশু) জয়ী হয়েছেন! তাই আজ আমরা কণ্ঠ ছেড়ে বলি: ‘আমার আশার খ্রিষ্ট জেগে উঠেছেন!’ (ভিক্তিমে পাসকালি লাউদেস)
যিশুর এই পুনরুত্থান, এটাই আমাদের আশার ভিত্তি। এর আলোকে, আশা আর সামান্য ভেলকি থাকে না। যিশুর রহমে, ক্রুশবিদ্ধ যিশু, পুনরুত্থিত যিশুর রহমে, আশা আর আশাহত করে না! স্পেস নন কনফুন্দিত! (রোম ৫: ৫)। আশা আর পালানোর রাস্তা নয়, আশাই চ্যালেঞ্জ; আশা কোনো ধোঁয়াশা নয়, আশাবাদই আমাদের শক্তি।
যাঁরা ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখেন, তাঁরা তাঁদের নরম হাত নিশ্চিন্তে রেখেছেন এক মহাশক্তিশালী দৃঢ় হাতে। তাঁরা উঠে দাঁড়াবেন, তাঁরা আবার হাঁটবেন। পুনরুত্থিত যিশুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও হয়ে ওঠেন আশার তীর্থযাত্রী, ভালোবাসার আর জীবনের নিরস্ত্র শক্তির বিজয়গাথার সাক্ষী।
খ্রিষ্ট জেগে উঠেছেন! এই শব্দেই লুকানো আমাদের অস্তিত্বের মানে, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য গড়া নই, জীবন আমাদের অভীষ্ট। ইস্টার, এটা তো জীবনের উৎসব! ঈশ্বর আমাদের তৈরি করেছেন জীবনকে লক্ষ্য রেখে, তিনি চান যেন এই কোটি মানুষের পরিবার আবার উঠে দাঁড়ায়! তাঁর চোখে প্রতিটি জীবন মূল্যবান! গর্ভের শিশুটি যেমন, তেমনি মূল্যবান বৃদ্ধেরা বা অসুস্থরাও, যাদের আজ দেশে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ উচ্ছিষ্ট মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মৃত্যু আর খুনের কত পিপাসা চারদিকে! প্রতিদিন যুদ্ধ আর লড়াইয়ের নামে পৃথিবীর দিকে দিকে আমরা প্রতিদিন শুধু খুনই প্রত্যক্ষ করি! পরিবারের ভেতরে পর্যন্ত, কত জিঘাংসা, নারী আর শিশু যার স্বীকার। যারা দুর্বল, যাদের চলন বা ভাষা আমাদের মতো নয়, আর যারা অভিবাসী, তাদের দিকে অবিরত ছুড়ে দেওয়া হয় তাচ্ছিল্য আর ঘৃণা।
এই দিনে, আমি চাই আমরা সবাই আবার আশা করতে শিখি, ফিরিয়ে আনি বিশ্বাস, অন্যের ওপর বিশ্বাস, নিজেদের ওপর বিশ্বাস, তাদের ওপর বিশ্বাস যারা আমাদের মতো নয়, বা যারা অন্য দেশ থেকে এসেছে, যারা সঙ্গে নিয়ে এসেছে ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন যাপন, আর ভিন্ন চিন্তা ধারণ ধরা! কারণ, সব ভিন্নতার ঊর্ধ্বে, আমরা সবাই এক স্রষ্টার সন্তান!
আমি চাই আমরা সবাই বিশ্বাস করি, শান্তি সম্ভব!
পবিত্র সমাধি থেকে, পুনরুত্থানের গির্জা থেকে, যেখানে এবার একই দিনে ক্যাথলিক আর অর্থোডক্সরা একত্রে ইস্টার পালন করছে, যেন আলো ছড়িয়ে পড়ে পুণ্যভূমি হয়ে গোটা পৃথিবীতে। আমি জানাতে চাই, আমিও ভাগীদার ফিলিস্তিন আর ইসরায়েলের খ্রিষ্টানদের কষ্টের এবং শুধু খ্রিষ্টান নয়, ফিলিস্তিন আর ইসরায়েলের সব মানুষেরও। এ সময়ে বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষের হওয়া আমাকে ভাবায়। কিন্তু সেই সঙ্গে আমি ভাবি গাজার মানুষের কথা, বিশেষত সেখানকার খ্রিষ্টানদের কথা, যাঁদের চারদিকে তীব্র সংঘাত শুধু মৃত্যু আর ধ্বংস উৎপাদন করে চলেছে, জিইয়ে রেখেছে এক নাটকীয় আর নারকীয় অমানবিক পরিস্থিতি। আমি হাত জোড় করে বলি যুদ্ধংদেহী পক্ষদের কাছে, আপনারা যুদ্ধ থামান, বন্দীদের ফিরিয়ে দিন, আর এগিয়ে আসুন সেই ক্ষুধার্তদের পাশে, যারা শুধু একফোঁটা শান্তির স্বপ্ন দেখে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শান্তি প্রতিষ্ঠা
- বিশ্ব শান্তি