রাজনীতির ব্যাকরণ

প্রথম আলো এন এন তরুণ প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৫০

একটি টক শোতে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে যা বলতে শুনলাম, তার সারমর্ম এ রকম: বাংলাদেশে এখন একজন রাজনীতিকের ইমেজ হলো ক্লাস ফাইভ পাস, উঠতি লোকাল মাস্তান থেকে বড় মাস্তান, তারপর জাতীয় পর্যায়ের মাস্তান। চাঁদাবাজির রেট অনেক হাই। দুই নম্বরি ব্যবসা থেকে বিশাল টাকার মালিক। তারপর এমপি এবং একসময় হয়তো মন্ত্রী।


জানা কথা হলেও নতুন করে মন বিষণ্ন হলো। অথচ এই দেশেও একদা রাজনীতি ছিল শিক্ষিত, ত্যাগী ও মানবিক মানুষের ব্রত। কোথায়, কীভাবে হারিয়ে গেল সেই সব দিন? এমন চিন্তা থেকেই ‘রাজনীতিক’দের জন্য লিখতে ইচ্ছা হলো। জানি, প্লেটো-কাঙ্ক্ষিত ‘ফিলোসফার কিং’ আমাদের এ পোড়ার দেশে কখনোই হবে না। তবুও ভালো রাজনীতির কথা নিরন্তর বলে যেতে হবে, লিখে যেতে হবে।


বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ঘটে, যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ভার্সাই চুক্তি, রুশ বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের সূচনা, ইতালিতে মুসোলিনির আবির্ভাব ও দুনিয়াব্যাপী ফ্যাসিজমের উত্থান, মহামন্দা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু প্রবণতা যা ইন্ডিয়া অ্যাক্টে প্রতিফলিত, ব্রিটিশ রাজনীতিতে লেবার পার্টির উত্থান ও শ্রমিকের অধিকার রক্ষার দিকে মনঃসংযোগ। এরই প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেরাল্ড লাস্কির চিন্তাজগতে ঘটে এক বিস্ময়কর বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ১৯২৫ সালে লাস্কি রচিত মহাগ্রন্থ গ্রামার অব পলিটিকস এসব বৈশ্বিক ঘটনাবলির ও লাস্কি চিন্তাজগতের পরিবর্তনেরই প্রতিফলন।


লাস্কি এই গ্রন্থে রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব, অধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রকৃতি নিয়ে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করেন। তিনি রাজনৈতিক কর্তৃত্বের একটি বহুবিধ ধারণা এবং এমন একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন, যা সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক সমতার ওপর গুরুত্ব দেয়।



লাস্কি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। বলেন, ক্ষমতা রাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত না হয়ে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বণ্টিত হওয়া উচিত। তিনি হবস এবং অস্টিন উত্থাপিত আইনি সার্বভৌমত্বের ধারণার সমালোচনা করেন। এর পরিবর্তে তিনি সার্বভৌমত্বের একটি বহুত্ববাদী ধারণা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পাশাপাশি একাধিক কর্তৃত্বের কেন্দ্র (যেমন শ্রমিক ইউনিয়ন, পেশাগত সংগঠন, স্থানীয় সরকার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব কর্তৃত্বকেন্দ্রের সহাবস্থানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।


তাঁর মতে, রাষ্ট্রই একমাত্র কর্তৃত্বের উৎস নয়। রাষ্ট্র বরং এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা অন্যদের সঙ্গে মিলেই শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে। লাস্কির এই বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি জি ডি এইচ কোল এবং লিয়ন দুগুইয়ের মতো চিন্তাবিদদের দ্বারা প্রভাবিত। তাঁরা মনে করতেন সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা জরুরি, যেন স্বেচ্ছাচারিতা ও দমন-পীড়ন ঠেকানো যায়।


লাস্কি জোর দিয়ে বলেন, সরকারের কাজ শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা নয়। সরকারের প্রধান কাজ হলো সবার জন্য কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি বৈষম্য মোকাবিলায় অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার পক্ষে মত দেন। লাস্কি বলেন, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ নয় এবং তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করেন, একটি অনিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র সার্বভৌমত্বের নামে ব্যক্তিস্বাধীনতা দমন করতে পারে। এর পরিবর্তে তিনি এমন একটি বিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থার কথা বলেন, যেখানে একাধিক প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে কর্তৃত্ব ভাগ করে নেয়। তিনি অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ তথা বাজার অর্থনীতির সমালোচনা করেন। কারণ, এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায্যতার সৃষ্টি করে। তাঁর মতে, সরকারের উচিত শ্রমজীবী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করা।


লাস্কি তাঁর বইয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার একটি নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। কেবলমাত্র রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতিই ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়; বরং ন্যায়ভিত্তিক সমাজে ব্যক্তির সম্ভাবনা বিকাশের সামর্থ্য হিসেবে তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি অর্থনৈতিক বৈষম্যকে স্বাধীনতার জন্য একটি মৌলিক হুমকি হিসেবে দেখেন এবং বলেন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ছাড়া রাজনৈতিক অধিকার অর্থহীন। কারণ, বৈষম্য গরিব ও শ্রমজীবী শ্রেণির জন্য সুযোগ সীমিত করে দেয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও