
'তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল সময়ের ব্যাপার'
ব্যস্ত সময় পার করছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহদি আমিন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সবাই তার কাছে জানতে চান তারেক রহমানের পরিকল্পনা, নীতি ও ভাবনার বিষয়ে।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের জিনা তাসরিনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
সংস্কার নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়নি, তখন থেকেই বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এ বিষয়ে কথা বলে আসছেন। তাই প্রশ্ন ওঠে—ছয়টি সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবে দলটি কেন বিরোধিতা করেছে?
মাহদির উত্তর, 'আমরা যেসব প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছি, তার অনেকগুলোই পরীক্ষামূলক বলে মনে হয়েছে—এমন উদাহরণ পৃথিবীর কোথাও তেমন নেই। আমরা বিশ্বাস করি, পরিবর্তন হওয়া উচিত টেকসই ও বাস্তব সম্মত। সেগুলো দেশের মানুষের সংস্কৃতি ও স্বভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।'
'যেমন: সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে এবং সংসদের সব কমিটির নেতৃত্ব বিরোধী সংসদ সদস্যদের হাতে থাকবে।'
'এনসিসিতে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে বিরোধী দলগুলোর জন্য বেশি সদস্য রাখা নির্বাচনী নীতিমালার পরিপন্থী। কারণ, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলেরই বেশি প্রভাব থাকার কথা। এই কাঠামো বিরোধী দলকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করলে সরকার পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা অস্থিতিশীল হতে পারে। এ ধরনের ভারসাম্যহীনতা অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে পাবেন না এবং এমন কিছু হলে কার্যকর শাসনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।'
'বাংলায় দেশের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবটিও প্রতীকী উদ্যোগ বলেই মনে হয়েছে। এটা বাস্তবে কোনো সংস্কার নয়।'
'এ ধরনের পরিবর্তনে নাগরিক জীবনের প্রকৃত সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান হবে না। বরং, বাস্তব সমাধান প্রয়োজন এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে মনোযোগ সরে যেতে পারে। ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া নামটি এর উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারেন।'
ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবটিও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। মাহদি জানান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের মতো বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশে এই বয়সে ভোট দেওয়ার নিয়ম আছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিএনপির মতে, 'এটা পাঁচ বছর হওয়া উচিত। যেমনটা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও অন্যান্য দেশে প্রচলিত ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায় আছে।'
'যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু লাতিন আমেরিকান দেশে প্রচলিত প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থার চার বছরের মেয়াদ বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত না,' বলেন তিনি।
বিএনপির ৩১ দফা ঘোষণা অনুযায়ী কেউ যেন পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকতে পারেন—এ অবস্থানে দলটি অটল। তবে কমিশনের প্রস্তাব ছিল, একজন ব্যক্তি তার পুরো জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
মাহদি বলেন, 'আমরা যদি ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রের সবচেয়ে ভালো উদাহরণগুলো দেখি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের কোনো সীমা নেই। দেশের সবচেয়ে উদার রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরাই প্রথম এই প্রস্তাব দিয়েছি এবং এখনো সেই অবস্থানে আছি। এর পেছনে যুক্তি ছিল—নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি করা এবং একইসঙ্গে পূর্ববর্তী জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও সফল নেতাকেও আবার সুযোগ দেওয়া, যাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।'
গত বছর ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে দলীয় নেতৃত্ব ও অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে হওয়া আলোচনা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, 'সংস্কার ও নির্বাচনকে পরস্পরবিরোধী করে তোলা হয়েছে—যা দুর্ভাগ্যজনক।'