
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছন্দ ফিরে পাক বাংলাদেশ
ক্রেগ আরভিনের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ের ১৫ সদস্যের টেস্ট ক্রিকেট দল এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সফরকারী দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল যথাক্রমে সিলেট ও চট্টগ্রামে ২০ ও ২৮ এপ্রিল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে এই দ্বিপক্ষীয় সিরিজের কোনো সম্পর্ক নেই। উভয় দেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট ক্রিকেটে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং তাদের এই ক্রিকেটে উজ্জীবিত করা, পাশাপাশি এই সিরিজের মাধ্যমে উভয় দেশের ক্রিকেটারদের সেরা ক্রিকেট মঞ্চে ছন্দে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই দ্বিপক্ষীয় সফরের আয়োজন।
বাংলাদেশ চাচ্ছে এই সিরিজের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের ছন্দে ফিরিয়ে আনতে। সাড়ে চার মাস পর আবার লাল বলের রোমাঞ্চের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ছন্দ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সাদা বল থেকে লাল বলে সুইচওভার করা একদম ভিন্ন মানসিকতার এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট এবং সিরিজ বিজয় নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রামে ২০০৫ সালে। এই দুই দেশ এবারের সিরিজ গড়ানোর আগ পর্যন্ত মোট ১৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে আটটিতে, পরাজিত হয়েছে সাতটিতে এবং তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছে। তবে জিম্বাবুয়েকে খর্বশক্তি ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
জিম্বাবুয়ে ২০২১ সালের পর টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের মুখ দেখেনি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সিলেটে বাংলাদেশকে পরাজিত করেছিল জিম্বাবুয়ে।
এই দলের কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা এর আগে বাংলাদেশের উইকেটে খেলেছেন। ক্রিকেটে কোনো দলকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তা ছাড়া টেস্ট মঞ্চ তো সেরা ক্রিকেটারদের জায়গা।
গত ১৫-১৬ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন ধীরে ধীরে লক্ষণীয় হয়েছে। ৩০ বছর আগের টেস্ট ক্রিকেট আর নেই। খেলার স্টাইল ও রং পাল্টে গেছে। আর এই পরিবর্তন টেস্ট ক্রিকেটকে করেছে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক ও আবেদনময়। টেস্ট ম্যাচে এখন সব সময় রেজাল্ট হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রচণ্ড প্রভাব এখনো সোজাসুজি টেস্ট ক্রিকেটে ভর করছে।
বাংলাদেশ স্কোয়াড গঠনের সময় যে বিষয়টি নির্বাচকদের ভাবায়, সেটি হলো লড়াইয়ের জন্য উপাদানের সীমাবদ্ধতা। এ ছাড়া ‘ক্রনিক রোগের’ মতো লেগেই আছে চোট সমস্যা। চোট সমস্যা সব দেশই মোকাবেলা করে—আমাদের বড় সমস্যা হলো উপাদান যে হাতে গোনা। একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে সেই স্থানে ‘ফিট’ করার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই মাথায় আনতে হয় নির্বাচকদের। তার পরও কিছু ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। খেলোয়াড় নেই কেন? খেলোয়াড় তৈরি করার প্রক্রিয়া থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আর কতকাল দূরে থাকবে।
গত তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল একদম সুবিধা করতে পারেনি। বোর্ডে আলাপ-আলোচনা কতটুকু হয়েছে জানি না। ‘অ্যাকশন পয়েন্ট’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখিনি। দেশে আমাদের নির্বাচকরা যেভাবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করেন, অন্য কোনো দেশে এই অবস্থা নেই।
তাসকিন আহমদ চোটে থাকায় তাঁকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তির কথা ভাবা হয়নি। টেস্ট স্কোয়াডে এবার একদম নতুন মুখ পেসার তানজিম হাসান। ২২ বছরের এই তরুণ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ১৫ জনের স্কোয়াডে এবার চারজন পেসার। স্পোর্টিং উইকেটের কথা কি ভাবা হচ্ছে? বাংলাদেশের পেস আক্রমণ যথেষ্ট শক্তিশালী। সচেতনতা বেড়েছে সবাই বোঝেন, দেশের বাইরে ভালো করার মূলমন্ত্র হলো স্পোর্টিং উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হওয়া এবং দলে নির্ভরযোগ্য পেস আক্রমণ। ইবাদত হোসেনকে নিয়ে কোনো রকম (চোটে ছিলেন এখনো শতভাগ ফিট নন।) ঝুঁকি নিতে চাননি নির্বাচকরা। পেস আক্রমণে নবাগত তানজিম হাসান ছাড়াও নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদ আছেন। এদিকে স্কোয়াডে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। তামিম ইকবালের পরিবর্তে স্কোয়াডে স্থান পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান। অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে ব্যাটিং লাইনআপ ভালো—তবে সব কিছুই নির্ভর করছে মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর।
আইসিসির ঠাসা এফটিপির (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) জন্য ক্রিকেটারদের ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। সারা বছর খেলতে হয়। বিশ্রাম কম পাচ্ছেন। এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু মোকাবেলা করার জন্য সব দেশের ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রিকেটারদের দম ফেলা এবং চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ না দিতে পারলে তো প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স আশা করা যাবে না। আর এর জন্য বোর্ডের আন্তরিক তাগিদ, উদ্যোগ ও সৃষ্টিশীলতার প্রয়োজন।