গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি: গন্তব্য যখন আমদানি বাজার…

ডেইলি স্টার শুভ কিবরিয়া প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২০:২৮

নববর্ষের উপহার!


বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলনের রেশ কাটেনি এখনো। সরকারপক্ষে বলা হচ্ছে, এই সম্মেলন আমাদের বিনিয়োগের এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্যায্য শুল্কযুদ্ধ যখন গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতার দিকে ঠেলছে, ঠিক তখনই এই বিনিয়োগ সম্মেলন দেশের মাটিতে স্বস্তি ও সুস্থিরতার পরিবেশ আনার চেষ্টা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের বরাতে।


কিন্তু এই 'সুস্থিরতা'র রেশ থাকতে থাকতেই নতুন বাংলা বছরের শুরুতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দেশে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে এক বিরল নজির সৃষ্টি করল। বিইআরসি শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ধার্য করেছে ৪২ টাকা। আর শিল্প–সংযোগে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করেছে ৪০ টাকা। বিইআরসির এই সিদ্ধান্তে নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৩ শতাংশ, পুরনো শিল্পে বাড়তি ব্যবহারে নতুন দাম যুক্ত হলো। গ্যাসের এই বাড়তি দাম ঘোষণার দিন ১৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকেই কার্যকর হয়েছে।


বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত এক অর্থে জাতির জন্য নববর্ষের উপহারই বটে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বাড়তি গ্যাসের দাম আমাদের নিজস্ব শিল্প আর নিজস্ব উৎপাদনকে কতটা প্রতিযোগিতাহীন করে দেবে? এই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চাপ আমাদের ভোক্তাসমাজ মোকাবিলা করবেই বা কী করে?


চাহিদা ও যোগানের ফারাক


দেশে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটে দেশে উৎপাদিত নিজস্ব গ্যাস ও আমদানি করা গ্যাসের মাধ্যমে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পেট্রোবাংলার আওতাধীন মোট তিনটি গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি যথাক্রমে গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (সিজিএফএল), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এবং দুটি আন্তর্জাতিক গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি (আইওসি) শেভরন ও তাল্লোর মাধ্যমে নিজস্ব গ্যাস আহরণ করা হয়।


অর্থাৎ দেশের গ্যাস উত্তোলন করে বাপেক্সের মাধ্যমে দেশের নিজস্ব কোম্পানি। আবার দেশের গ্যাস উত্তোলন করে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে নিয়োজিত বিদেশি তেল কোম্পানিগুলো। তাদের উৎপাদিত গ্যাস চড়া দামে কিনে ভোক্তাদের সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে দেশের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় গ্যাস, আসে এলএনজি হিসেবে।


দেশে উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানি করা এলএনজি রি-গ্যাসিফাইড করে পেট্রোবাংলার আওতাধীন সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলের (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) মাধ্যমে সঞ্চালন করা হয়। এই গ্যাস পেট্রোবাংলার আওতাধীন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি যথাক্রমে তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে আট শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, বাণিজ্যিক, গৃহস্থালি ও চা-বাগান হচ্ছে এই আট শ্রেণীর গ্রাহক।


দেশে গ্যাসের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সেই হারে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত গ্যাস আমদানি বাড়ছে।


গ্যাস আমদানি করা হয় মূলত দেশের বাইরে থেকে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির মাধ্যমে। গ্যাসের বর্তমান চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক ঘাটতি আছে। বর্তমানে আটটি গ্রাহক শ্রেণীতে অনুমোদিত লোড পাঁচ হাজার ৩৫৬ এমএমসিএফডি। প্রতিদিন গ্যাসের স্বাভাবিক চাহিদা প্রায় তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার ২০০ এমএমসিএফডি। এই চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানিকৃত এলএনজি মিলিয়ে সরবরাহ করা হয় গড়ে প্রায় দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার এমএমসিএফডি। প্রতিদিনই ঘাটতি থাকে গড়ে প্রায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস।


পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আট গ্রাহক শ্রেণীতে স্বাভাবিক চাহিদা তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার এমএমসিএফডি গ্যাসের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে গড়ে প্রায় দুই হাজার ৪৯৩ এমএমসিএফডি গ্যাস।


২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব বলছে, দেশে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয় তার ৪২ শতাংশ বিদ্যুতে, ১৯ শতাংশ শিল্পে, ১৮ শতাংশ ক্যাপটিভ পাওয়ারে, ১১ শতাংশ গৃহস্থালিতে, পাঁচ শতাংশ সারে, ৪ শতাংশ সিএনজিতে এবং এক শতাংশ বাণিজ্যিক ও চা-বাগানে ব্যবহৃত হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও