অধুনা বিভিন্ন বিষয়ে চারদিকে বেশি বেশি দাবি ওঠার মূল কারণ হলো যে, বর্তমান পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি এর জন্য এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি, বৈশ্বিক সংকট, এবং জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর ফলে, বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং জনগণ তাদের স্বার্থ এবং অধিকার নিয়ে আরও বেশি করে দাবি তুলছে। শুধু বহির্বিশ্বে নয়- জুলাই ২০২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেও এটি এক ধরনের প্রতিবাদের সংস্কৃতি তৈরি করছে, যেখানে সমাজের প্রতিটি অংশ আত্মবিশ্বাসীভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছে।
যারা এই দাবি জানাচ্ছে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রেশার গ্রুপ বা চাপদল। চাপদল হলো এমন একটি সংগঠন বা গোষ্ঠী, যা সরকার বা নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। তবে, প্রেশার গ্রুপ সরাসরি সরকার পরিচালনা করে না বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তারা বিভিন্ন উপায়ে— যেমন রাস্তায় ব্যারিকেড, লবিং, বিক্ষোভ, প্রচার অভিযান, অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারকে প্রভাবিত করে দাবি আদায়ের করার চেষ্টা করছে।
এসব চাপদল সরকার পরিচালনা করে না – তারা রাজনৈতিক দল নয়, বরং নির্দিষ্ট ইস্যুতে প্রভাব বিস্তারকারী গোষ্ঠী। তারা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে। তারা বিভিন্ন উপায়ে, যেমন লবিং, গণআন্দোলন, প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে কাজ করে। অনেক সময় তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াই সামাজিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে। আন্তর্জাতিকভাবে সেব চাপদল আছে তাদের মধ্যে যেমন গ্রিনপিস (Greenpeace) – পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International) – মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য কাজ করে। যেমন বাংলাদেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (BGMEA) – পোশাক খাতের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) – দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে, ইত্যাদি।
চাপদল ধারণা মূলত আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশের সঙ্গে জড়িত। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন থেকেই এই গোষ্ঠীগুলোর উদ্ভব হয়। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন যুগে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে, তবুও আধুনিক অর্থে প্রেশার গ্রুপের সংগঠিত রূপ গড়ে ওঠে ১৮শ ও ১৯শ শতকে, বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের পর। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় বিভিন্ন শ্রেণির গোষ্ঠী রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করত। যেমন: গ্রিসে দার্শনিক ও বিদ্বানদের গোষ্ঠী নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতো। রোমান সাম্রাজ্যে ধনী ভূস্বামী ও ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদদের উপর প্রভাব বিস্তার করত। তবে এসব গোষ্ঠী আধুনিক প্রেশার গ্রুপের মতো সংগঠিত ছিল না।