বাঙালি মধ্যবিত্তের ভালো-মন্দ

www.ajkerpatrika.com সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২

মধ্যবিত্ত নিজের লাভ-লোকসান বোঝে না এমন অপবাদ তার বিরুদ্ধে বিশ্বের কোনো জায়গায় কখনো করা হয়নি, বাংলাদেশে তো নয়ই। বাঙালি মধ্যবিত্ত সব সময়ই হিসাব করে চলে, লাভের সুযোগ দেখলে উৎফুল্ল হয়, বিপদের আভাস অনুমান করা মাত্র নিজেকে গুটিয়ে নেয়। দুই ব্যাপারের কোনোটাতেই আপেক্ষিকতার ধার ধারে না, এসব ব্যাপারে সে চরমপন্থী। এই যে তার আত্মসচেতনতা এর কারণ আছে। সে প্রসঙ্গে আমরা আবার আসব। আপাতত আমাদের বিবেচ্য ব্যক্তিগত লাভ-লোকসান নয়, সমষ্টিগত ভালো-মন্দ। সমষ্টির জন্য বাঙালি মধ্যবিত্ত কতটা কী করে এবং সেখানে তার ভালো ভূমিকার এবং খারাপ কাজের হিসাবনিকাশটা কেমন দাঁড়াবে, আমরা সেদিকেই তাৎক্ষণিকভাবে তাকাতে চাইব। তবে বাঙালি মধ্যবিত্তের ভালো কাজের তালিকাটা সামান্য নয়। আমরা যে সংস্কৃতির পরিচয়ে পরিচিত হই, কিছুটা হলেও গর্ব করি, তার গঠনে মধ্যবিত্তের ভূমিকাই প্রধান। উচ্চবিত্ত থেকেছে উদাসীন; বিত্তহীনদের ছিল এবং এখনো রয়েছে অপরিসীম লালসা। প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার কাজটা মধ্যবিত্তই করেছে, তাকেই করতে হয়েছে। না করে উপায় ছিল না। কেননা সব দেশেই মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিমনস্ক, আমাদের দেশেও তাই। আমাদের দেশে হয়তো কিছুটা বেশিই। কেননা অন্যান্য ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনীতিতে, আমাদের অর্জনটা উৎফুল্ল হওয়ার মতো নয়, বরং বেশ ম্রিয়মাণ। সে জন্য মধ্যবিত্তের পক্ষে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্যকলা, শিল্পকলার ওপর জোর দিতে হয়েছে। কেননা সংস্কৃতিতেই সে সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, অন্যত্র নয়।


ব্যাপার আরও ছিল, সেটা হলো আত্মপরিচয়। সংস্কৃতি দিয়েই সে নিজেকে পরিচিত করেছে, অন্যদের কাছে তো বটেই, নিজের কাছেও। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিরই মানুষ। পারিবারিকভাবে রবীন্দ্রনাথরা জমিদার ছিলেন ঠিকই, কিন্তু রুচি ও সংস্কৃতিতে তিনি নিজে ছিলেন মধ্যবিত্ত। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, মধুসূদন ও বেগম রোকেয়াও মধ্যবিত্তই। আলাউদ্দিন খাঁ, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, সত্যজিৎ রায়, জয়নুল আবেদিন এই শ্রেণি থেকেই এসেছেন। জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন বসু—সবাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তান।


শিক্ষাকেও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের সমষ্টিগত অর্জন মধ্যবিত্তের কারণেই। বিজ্ঞানী হিসেবে যাঁরা বড় মাপের কাজ করেছেন, তাঁদের কেউই মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাইরে নন, হওয়া সম্ভব ছিল না, হওয়ার উপায় নেই। রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতিটিতেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছ থেকেই নেতৃত্ব এসেছে, তা সে আন্দোলন উদারনৈতিক হোক কিংবা হোক বামপন্থী। চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, এ কে ফজলুল হক সবাই মধ্যবিত্ত, শেখ মুজিবুর রহমানও তাই, মওলানা ভাসানী এবং কমরেড মুজফফর আহমদ দুজনই মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে এসেছেন। রাজনৈতিক সচেতনতা যা তৈরি হচ্ছে, সেটাও মধ্যবিত্তেরই অবদান। কৃষক আন্দোলন হয়েছে, তাতে তীব্রতা ছিল, অসচেতনতাও ছিল। কিন্তু সেগুলো স্থানীয় এবং বিচ্ছিন্ন। ব্যাপক আন্দোলন মধ্যবিত্ত নেতৃত্বেই তৈরি।


উচ্চবিত্তরা আন্দোলনে আসাটা পছন্দ করেনি। তাদের সংখ্যাও অবশ্য কম ছিল। কিন্তু মধ্যবিত্তের অসুবিধা যেটা তা হলো উচ্চবিত্তের সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্তের একধরনের হীনম্মন্যতা বোধ। সরাসরি বলতে চাইলে বলা যায় যে মধ্যবিত্ত নিজেই উচ্চবিত্ত হতে চায়। নিচে নামাকে সে যত ভয় করে, ততটা ভয় মৃত্যুকেও করে কি না সন্দেহ। ওদিকে উচ্চবিত্তের পক্ষে নিচে নেমে যাওয়ার ভয়টা কম। সে জানে যে সে রয়েছে বেশ শক্ত অবস্থানে। রাজনৈতিক আন্দোলন হয়, হবে, হচ্ছে; রাষ্ট্রের ভাঙা-গড়া চলছে, চলবে, কিন্তু উচ্চবিত্তের তাতে কোনো বিপদ ঘটে না। সে নিরাপদেই থাকে। কেবল তা-ই নয়, তার সুবিধাই হয়। দেশে এত যে রাষ্ট্রনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেল এর কোনোটাই বিত্তবানদের জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনেনি, বরং প্রতিটি পরিবর্তনেই সে লাভবান হয়েছে, আগে যতটা ধনী ছিল পরে তার চেয়ে অধিক ধনী হয়েছে।


ওই পরিবর্তনগুলো মধ্যবিত্তের একাংশের জন্যও লাভের কারণ হয়েছে। পাকিস্তান তৈরি, পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠন, বাংলাদেশে নানা রাজনৈতিক ‘বিপ্লব’—এসবের ভেতর দিয়ে মধ্যবিত্তের একাংশ ওপরে উঠে গেছে, বিত্তবান হয়েছে, কারও কারও বিত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে অবিশ্বাস্য পরিমাণে। অপরাংশ, যেটা বড় অংশ আসলে, সেটা গেছে নেমে। তাদের জীবনে সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু তাই বলে তারা যে বিত্তহীনদের সঙ্গে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিকভাবে এক হয়ে যেতে পেরেছে তা নয়। তারা মধ্যবিত্তই রয়ে গেছে। বলা যায় নিম্নমধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু শ্রমজীবী হিসেবে যে নিজেদের গণ্য করবে, এমনটা ঘটেনি।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও