পুলিশ সংস্কার কি আদৌ হবে, কতটুকু হবে

প্রথম আলো কল্লোল মোস্তফা প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৫, ২০:০৪

অন্তর্বর্তী সরকার জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর। কমিশন পুলিশ সংস্কারের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি।


সংস্কারের জন্য কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা অনুসরণ করে পুলিশ কর্তৃক পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার–তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, আসামিকে কাচঘেরা কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা, সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া তল্লাশির অভিযোগ গ্রহণে জরুরি কল সার্ভিস চালু, অভিযানকালে ‘বডি ক্যামেরা’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা বন্ধ করা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পুলিশের মানাবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা প্রদান, থানায় জিডি ও মামলা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা, পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই–বাছাই না করা, ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির সংস্কার, পুলিশের কার্যক্রম তদারকিতে থানা বা উপজেলাভিত্তিক ‘ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি’ গঠন, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত, পুলিশের মধ্যে ‘জেন্ডার ও চাইল্ড সেন্সিটিভিটি’ নিশ্চিত করা ইত্যাদি। 


এই সুপারিশগুলো জনমুখী পুলিশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সন্দেহ নেই। কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে পুলিশ বাহিনীর ওপর দলীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব। আর এই প্রভাব থেকে পুলিশ বাহিনীকে মুক্ত রেখে পেশাদারত্বের সঙ্গে পরিচালনার জন্য অনেক দিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়টি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বহুল প্রত্যাশিত ও আলোচিত স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের ব্যাপারে কোনো সুষ্পষ্ট সুপারিশ ও রূপরেখা দেওয়া হয়নি। 


কমিশনের ৪ নম্বর সুপারিশে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে ‘নীতিগতভাবে ঐকমত্য’ পোষণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে, যা খোদ পুলিশ বাহিনীসহ পুলিশ সংস্কারপ্রত্যাশী অনেককেই আশাহত করেছে। সংস্কার কমিশন তো গঠনই করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের মাধ্যমে। সেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশেই যখন আবার ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ গ্রহণের কথা বলা হয়, তখন তা সংস্কারপ্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেওয়ার জায়গা থেকে করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। 



এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের অপরাধ তদন্তে স্বতন্ত্র অভিযোগ কমিশন গঠনে সুপারিশ না থাকা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি না রাখার কারণেও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।


গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দেশের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালানোর কাজে ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো পুলিশ বাহিনী। যে প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে, সেই প্রতিষ্ঠানই পরিণত হয়েছিল জনগণের বিপক্ষে জুলুমের হাতিয়ারে। পুলিশ বাহিনী এ সময় সরকারি দলের হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন থেকে শুরু করে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ভোট জালিয়াতি, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা, গায়েবি মামলা ইত্যাদি ভয়াবহ অপকর্মে লিপ্ত ছিল, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের পর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মধ্য দিয়ে। 
এ কারণে বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও রাষ্ট্রীয় জুলুম থেকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো পুলিশ সংস্কার। অবাক করা বিষয় হলো, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য যেসব সংস্কার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, সেখানে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।


বলা হচ্ছে, পুলিশ সংস্কারের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েই বাস্তবায়ন করা যাবে। কমিশনের খুঁটিনাটি সব সুপারিশে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন হয়তো নেই। কিন্তু স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন কিংবা ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির মতো গুরুতর সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে সংস্কার বাস্তবায়ন ও টেকসই করা কঠিন হবে। এ কারণে খোদ পুলিশের সদস্যরাই মনে করছেন, যে ‘প্রশাসনিক ব্যবস্থার’ মাধ্যমে পুলিশ সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তার ফলে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তা আসলে নষ্ট হবে। 


এ বিষয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের সদস্যরা নিজেরাই বলছেন, পুলিশের মূল সমস্যা হলো অবৈধ আদেশ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার। এ প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে। যদি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে এ কাজগুলো করা যেত, তাহলে পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব কমে যেত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্তমান ব্যবস্থায় চলতে থাকলে এই পুলিশ কখনোই ঠিক হবে না। (সুপারিশ নিয়ে পুলিশে ক্ষোভ, বলবেন প্রধান উপদেষ্টাকে, প্রথম আলো, ১৬ মার্চ ২০২৫)

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও