
কোল্ডস্টোরেজের সংকটে বহির্বিশ্ব যে পদ্ধতি অনুসরণ করে
উন্নত দেশে ফল ও সবজি কোল্ডস্টোরেজ সংরক্ষণের জন্য বেশকিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এগুলো পণ্যের গুণগতমান, পুষ্টিগুণ এবং সংরক্ষণকাল দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে।
কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণের জন্য নিয়ম ও পদ্ধতি:
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ভিন্ন ভিন্ন ফল ও সবজির জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণভাবে শীতল সংরক্ষণ: ০°C থেকে ১০°C (আঙুর, আপেল, স্ট্রবেরি, গাজর, ফুলকপি)। হিমায়িত সংরক্ষণ: -১৮°C বা তার কম (বেরি, বরবটি, সবুজ মটর)। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল সংরক্ষণ: ১০°C থেকে ১৫°C (কলা, পেঁপে, আম)।
আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ : নিম্ন আর্দ্রতা (Low Humidity, ৫৫-৬৫ শতাংশ): পেঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদি। মাঝারি আর্দ্রতা (Medium Humidity, ৮৫-৯০ শতাংশ): আপেল, নাশপাতি, গাজর ইত্যাদি। উচ্চ আর্দ্রতা (High Humidity, ৯০-৯৫ শতাংশ): শসা, লেটুস, পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি। আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোল্ডস্টোরেজে হিউমিডিফায়ার ও ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা হয়।
নিয়ন্ত্রিত বায়ুমণ্ডল সংরক্ষণ: অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আপেল, নাশপাতি ও আঙুরের সংরক্ষণে বেশি ব্যবহৃত হয়। খাদ্য পচনকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
বিশেষায়িত সংরক্ষণ পদ্ধতি: মডিফাইড অ্যাটমোস্ফিয়ার প্যাকেজিং, সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ বা ফিল্ম ব্যবহার করা হয়, যা গ্যাসের বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করে। লেটুস, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
হাইড্রোকুলিং ফল ও সবজি দ্রুত ঠান্ডা করতে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হয়। গাজর, লেটুস, ভুট্টা ও টমেটোর জন্য কার্যকরী। ভ্যাকুয়াম কুলিং, উচ্চগতির শীতলীকরণ প্রযুক্তি, যেখানে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ কমানো হয়। মূলত লেটুস, পালং শাক, ব্রকলির মতো পাতাযুক্ত সবজির জন্য ব্যবহৃত হয়।
সঠিক বাছাই ও প্যাকেজিং: সংরক্ষণের আগে পচা বা ক্ষতিগ্রস্ত ফল ও সবজি সরিয়ে ফেলা হয়। বায়ু চলাচলের জন্য ছিদ্রযুক্ত বাক্স বা ক্রেট ব্যবহার করা হয়। কাগজ বা বায়োডিগ্রেডেবল ফিল্ম দিয়ে মোড়ানো হয়।
কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট: সংরক্ষণ → পরিবহন → খুচরা বিক্রি → গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো—এই পুরো প্রক্রিয়ায় নিরবচ্ছিন্ন কোল্ড চেইন মেইনটেন করা হয়। কোল্ড ট্রাক, রেফ্রিজারেটেড কন্টেইনার এবং স্মার্ট সেন্সর ব্যবহার করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
উন্নত দেশে ফল ও সবজি সংরক্ষণের আধুনিক কৌশল ব্যবহারের ফলে পণ্য দীর্ঘদিন সতেজ থাকে, খাদ্য অপচয় কম হয় এবং এসব সুবিধার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারেন এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে সক্ষম হন।
উন্নত দেশে কৃষকরা কোল্ডস্টোরেজ থেকে যে সুবিধা পেয়ে থাকেন:
দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ: শাকসবজি, ফলমূল, দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস ও মাছ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পণ্য নষ্ট হওয়ার হার কমে যায়, ফলে কৃষকের ক্ষতি কম হয়।
বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা: মৌসুমের সময় উৎপাদিত অতিরিক্ত পণ্য সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যায়। বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়।
গুণগতমান বজায় রাখা: আধুনিক কোল্ডস্টোরেজগুলো তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা পণ্যের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখে। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত কোল্ড চেইন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংরক্ষণ
- ফল ও সবজি
- কোল্ড স্টোরেজ