You have reached your daily news limit

Please log in to continue


গ্রামবাংলায় খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড

“...সে কাল আর নাই। কালের অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। মাঠের বুক চিড়িয়া রেল লাইন পড়িয়াছে। তাহার পাশে টেলিগ্রাফ তারের খুঁটির সারি।

বিদ্যুৎ-শক্তিবহ তারের লাইন। মেঠোপথ পাকা হইয়াছে। তাহার উপর দিয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে মোটর বাস ছুটিতেছে। নদী বাঁধিয়া খাল কাটা হইয়াছে।

লোকে হুঁক্কা ছাড়িয়া বিড়ি-সিগারেট ধরিয়াছে। কাঁধে গামছা, পরনে খাটো কাপড়ের বদলে বড় বড় ছোকরারা জামা, লম্বা কাপড় পরিয়া সভ্য হইয়াছে। ছ-আনা, দশ-আনা ফ্যাশনে চুল ছাঁটিয়াছে। ভদ্রগৃহস্থঘরের হাল-চাল বদলাইয়াছে।”

(তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘রাইকমল’)

আসলে তো তাই। সব কিছুর পরিবর্তন ঘটছে, যেমনি গ্রামের, তেমনি গ্রামে বাস করা মানুষগুলোর জীবন-জীবিকার। যেমন—একসময় কৃষি ছিল গরিবের জীবিকার প্রধান উৎস। আর কৃষি বলতে অন্যের জমিতে ফসল উৎপাদনে শ্রম দেওয়া, তা-ও আবার একটি ফসলে। বছরের বাকি সময়ে জুতসই কর্মসংস্থানের অভাবে আধাপেটে কিংবা না খেয়ে থাকা।

কিন্তু এখন মাঠের বুক চিড়ে ট্রেন চলা কিংবা মেঠোপথ পাকা হওয়ার ফলে ঊর্ধ্বশ্বাসে যন্ত্রশকটের ছুটে চলা ও বিদ্যুত্শক্তির কল্যাণে আধুনিক জ্বালানিতে প্রবেশ ইত্যাদি প্রমাণ করে যে গ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। পণ্য ও উপকরণ বাণিজ্যে বিনিময় এবং তা দ্রুততর হচ্ছে, গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও কাজের সন্ধানে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। পুরো অবকাঠামোগত সুবিধা কৃষি থেকে অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলছে। ইদানীং দেখা যায়, কৃষি কাজের বা খামারের বাইরে ঘটা অ-কৃষিজ কর্মকাণ্ড জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে গরিবের সামনে উপস্থিত। শুধু পুরুষ নয়, এমনকি গরিব মহিলারাও এসব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আয় বৃদ্ধিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। তবে স্বীকার করতেই হবে যে গরিববান্ধব অ-কৃষিজ কর্মকাণ্ড বিস্তৃতির পেছনে বড় অবদান রেখেছে একদিকে সবুজ বিপ্লব এবং গড়ে ওঠা গ্রামীণ অবকাঠামো। এর ফলে গ্রামীণ সমাজে আয় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভোগ ও পরিধানে পরিবর্তন ঘটছে, যা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

দুই.

এরই মধ্যে অনেক পণ্ডিত গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জীবনকুশলতায় খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের ভূমিকা নিয়ে বেশ চমকপ্রদ বিশ্লেষণ করেছেন। অতি সম্প্রতি সমাপ্ত গবেষণাগুলোতে এসব কর্মকাণ্ডকে পল্লী উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে গ্রামীণ খানার মোট আয়ের প্রায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ এই খাত থেকে উৎসারিত হয় এবং এই খাতেই আবার গ্রামের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ সংঘটিত হয়। এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অ-কৃষিতে নিয়োজিত কর্মকাণ্ড গ্রামের মহিলা ও ভূমিহীন দরিদ্রের জন্য জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস এবং সেহেতু এ দেশ বিস্তৃত আশীর্বাদস্বরূপ। এক গবেষণা প্রবন্ধে খুব সুন্দরভাবে খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে এবং আমরা তা পাঠকের জন্য তুলে ধরতে পারি : অর্থনৈতিক রূপান্তরের সময় গ্রামাঞ্চলে খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের আবির্ভাব এবং দ্রুত বিস্তৃতি আর্থ ও কর্মসংস্থানের একটি প্রধান উৎস হিসেবে দাঁড়ায়। উন্নয়নের প্রথম দিকে একটি ছোট খাত থেকে, যা প্রায়ই প্রধানত খণ্ডকালীন এবং জীবন নির্বাহমুখী, ধীরে ধীরে অ-কৃষি অর্থনীতি শুধু গ্রামাঞ্চলের জন্য নয়, বরং পুরো অর্থনীতির জন্যও হয়ে ওঠে প্রবৃদ্ধির চালকযন্ত্র। মহিলা ও দরিদ্রদের কল্যাণের পরিপ্রেক্ষিতে এর প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং কখনো কখনো কৃষি খাত থেকে জন্ম নেওয়া বৈষম্য পরিস্থিতিতে সমতা বিধান করে।

বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে কৃষির চেয়ে কৃষিবহির্ভূত বা অ-কৃষিজাত কর্মকাণ্ড থেকে উৎসারিত আয়ের প্রবৃদ্ধির হার ছিল বেশি, যার ফলে গ্রামের দরিদ্র শ্রেণি অ-কৃষি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে গড়পড়তা আয় বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে গরিব শ্রমিক শ্রেণি গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষিতে মজুরির হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বিস্তৃত অ-কৃষিজাত কর্মকাণ্ডকে দরিদ্রবান্ধব বা দরিদ্রমুখী বলে চিহ্নিত করা চলে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সামনেও ক্রমবর্ধিষ্ণু শ্রমশক্তির জন্য উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এক দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ। দ্রুত গ্রাম-নগর অভিবাসন সত্ত্বেও কর্মোপযোগী বয়সের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ শ্রম বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে এবং তাদের বেশির ভাগ গ্রামেই অবস্থান করছে। তবে গ্রামে বাস করলেও এই বর্ধিষ্ণু শ্রমশক্তিকে কৃষি খাতে নিয়োজিত রাখার বেশ কিছু সমস্যা আছে। এর প্রধান কারণ হতে পারে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ তো নেই, বরং প্রতিবছরই নানা চাহিদার বাহানায় চাষযোগ্য জমি কমছে। দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ অঞ্চলেই শস্য নিবিড়তা সূচক প্রায় ২০০ শতাংশের বেশি এবং তা প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। তৃতীয়ত, শস্য উৎপাদন এখন প্রযুক্তিনির্ভর, যার ফলে যে মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, ঠিক সেই মাত্রায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় না (কর্মসংস্থানে উৎপাদনের স্থিতিস্থাপকতা অপেক্ষাকৃত কম। অর্থাৎ জমির উৎপাদনশক্তি যত বাড়ছে, ততই শ্রমিক কম লাগছে। সব শেষে অতীতের সব উন্নয়ন সত্ত্বেও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অবকাশ এখনো আছে, যেমন আছে যান্ত্রিক চাষাবাদ গ্রহণ করে একরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির।

তিন.

বর্তমান লেখায় আমরা অ-কৃষি খাতের একটি সীমিত সংজ্ঞা ব্যবহার করেছি, যেখানে কৃষিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মধ্যে গবাদি পশু, মাছ চাষ ও বন কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে পুঁজি লগ্নির প্রকৃতির নিরিখে আমরা তিন ধরনের কাজ চিহ্নিত করতে পারি যথা : (ক) স্ব-নিয়োজিত জীবন—নির্বাহমুখী কুটির শিল্প, গ্রামীণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মজুরি কর্মসংস্থান, পরিবহন পরিচালন, নির্মাণ শ্রম ইত্যাদি। স্মর্তব্য, এগুলো মূলত দৈহিক শ্রমনির্ভর কর্মকাণ্ড; (খ) বেতনভুক্ত শিক্ষক, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মচারী, ডাক্তার, ইমাম এবং অন্যান্য সেবাকাজে নিয়োজিত শ্রমিক, যাদের প্রদত্ত শ্রমকে এ ক্ষেত্রে মানবপুঁজি হিসেবে চিহ্নিত করা যায় এবং (গ) বাণিজ্যভিত্তিক গ্রামীণ শিল্প খাতে অন্তর্ভুক্ত থাকছে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, দোকান, ছোটখাটো ব্যবসা, বড় ও মাঝারি ব্যবসা, ঠিকাদারি ইত্যাদি বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই কাজগুলো সাধারণত দৈহিক ও মানব পুঁজি নির্ভর।

প্রথমেই খানাগুলোর প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পেশা এবং খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য উপস্থাপন করা যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, অধুনা খানাগুলোর বেশির ভাগ উপার্জনকারী সদস্য খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে প্রাথমিক পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং আরো কিছুসংখ্যক উল্লেখ করেছে দ্বিতীয় পেশা হিসেবে। অতীতের তুলনায় এ অনুপাত নিঃসন্দেহে বেশি। সুতরাং পরিসংখ্যান বলে দেয় যে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনকারীদের একটি বড় অংশ অ-কৃষিজ কর্মকাণ্ড বেছে নিচ্ছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ উপার্জনকারীর প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পেশা হিসেবে খামারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ভূমিকা রাখছে। শুধু তা-ই নয়, পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে যেমন এদের গুরুত্ব বাড়ছে, তেমনি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাড়ছে এদের অবদান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন