তামিম রক্ষা পেলেন, আমাদের করণীয় কী
বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খেলার মাঠে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারকা এই ক্রিকেটারের জন্য হেলিকপ্টার আনা হলো। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। নিকটস্থ কেপিজে ফজিলাতুন্নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কার্ডিয়াক টিম তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী সময়ে হার্টে দুটি রিং পরায়।
আমি নিজে চিকিৎসক। বর্ণনা থেকে বুঝলাম, তামিম ইকবাল ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে যে চিকিৎসাটি প্রদান করা হয়েছে, চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় তাকে বলা হয় প্রাইমারি পিসিআই। এতে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে বিশেষায়িত ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে অ্যানজিওগ্রাম করে কালপ্রিট ভ্যাসেল, মানে আক্রান্ত রক্তনালিতে রিং বা স্টেন্ট পরিয়ে দেওয়া হয়।
উন্নত বিশ্বের এ চিকিৎসাটি এখন বাংলাদেশে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে। এই প্রাইমারি পিসিআইয়ের মাঝখানে তামিম ইকবালকে লম্বা সময় সিপিআর, মানে বুকে চাপ দিয়ে হার্টের কার্যকারিতা চালু করার চিকিৎসাসহ ডিসি শক দিয়ে তাঁর বন্ধ হয়ে যাওয়া হার্টকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি যে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ক্রিকেট তারকা। তবে তিনি এখনো সংকটমুক্ত নন।
একজন তারকা ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে এবং কেপিজে হাসপাতালে কার্ডিয়াক সুবিধা থাকার কারণে হয়তো তামিম দ্রুততম সময়ে এই উন্নত চিকিৎসা পেয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন। গর্বের কথা বলি। যে প্রাইমারি পিসিআই চিকিৎসাটি বাংলাদেশে তামিমের ক্ষেত্রে সফলভাবে দেওয়া হয়েছে, ইংল্যান্ড বা আমেরিকার মতো উন্নত দেশে কোনো খেলোয়াড় এ রকম অসুস্থ হলেও সেই একই চিকিৎসা তাঁদের দেওয়া হবে। অর্থাৎ হৃদ্রোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন গর্ব করতে পারে। তামিমের সফল চিকিৎসার এ ঘটনা বাংলাদেশের চিকিৎসার আধুনিকায়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি বাংলাদেশে এসে এ দেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তামিম ইকবাল একজন ভিআইপি। তাই দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। একজন সাধারণ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি কোথায় যাবেন? কী চিকিৎসা নেবেন? তাঁদের জন্য তো আর হেলিকপ্টার চলে আসবে না।
এ ক্ষেত্রেও ভালো সংবাদ আছে। বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক কার্ডিয়াক সেন্টার রয়েছে, যেখানে হৃদ্রোগের সব চিকিৎসা ও সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। একসময় একটা অ্যানজিওগ্রাম করার জন্য অন্তত পাশের দেশ ভারতে যেতে হতো। অথচ আজ বাংলাদেশে অ্যানজিওগ্রাম, অ্যানজিপ্লাস্টি (রিং পরানো), বাইপাস সার্জারি, ভাল্ভ সার্জারি, এমনকি বুক না কেটে মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি সফলতার সঙ্গে প্রতিদিন সম্পন্ন হচ্ছে।
তবু আকস্মিক মৃত্যু থেমে নেই। এর একমাত্র কারণ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। হৃদ্রোগে আকস্মিক মৃত্যু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদ্রোগে মারা যান, যার ৫৪ শতাংশের জন্য উচ্চ রক্তচাপ দায়ী। এ ছাড়া তামাক ব্যবহার ও বায়ুদূষণ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদ্রোগে মারা যায়, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে তামাকের কারণে হৃদ্রোগে বছরে ১৯ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।